শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

গবেষণা প্রতিবেদন

পাকস্থলী ক্যানসারের জীবাণু বহন করছে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

পাকস্থলী ক্যানসারের  জীবাণু বহন করছে  বিশ্বের অর্ধেক মানুষ

১৯৮২ সালে মানুষের পেটে সর্পিল আকৃতির ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেছিলেন দুই অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ড. ব্যারি মার্শাল ও ড. রবার্ট ওয়ারেন। মার্শাল ও ওয়ারেন আবিষ্কৃৃত ব্যাকটেরিয়াটি ‘হেলিকোব্যাক্টর পাইলোরি’ বা সংক্ষেপে ‘এইচ. পাইলোরি’ নামে পারিচিত। এ ক্ষুদ্র জীবাণুটি পেটের তীব্র অম্লীয় পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে, যেখানে সাধারণত অন্য ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না। ওই দুই বিজ্ঞানীর গবেষণায় ইঙ্গিত ছিল, এ ব্যাকটেরিয়াই পেটের আলসার ও কিছু পেটের ক্যানসারের প্রধান কারণ।

সেই সময় অনেক চিকিৎসকের অনুমান ছিল, আলসারের কারণ মানসিক চাপ বা ঝাল খাবার খাওয়া। সবাইকে ভুল প্রমাণ করতে ড. মার্শাল বিস্ময়কর একটি কাজ করলেন। নিজেই পান করলেন ‘এইচ. পাইলোরি’ ব্যাকটেরিয়াওয়ালা দ্রবণ। কিছুদিনের মধ্যে তিনি গ্যাস্ট্রাইটিসে আক্রান্ত হলেন, যা পেটের এক ধরনের প্রদাহ। তার এমন কাজে প্রমাণ মিলল, এ ব্যাকটেরিয়া সত্যিই রোগ তৈরি করতে পারে। তার এ সাহসী পদক্ষেপের ফলে আলসারের প্রধান চিকিৎসা হয়ে উঠল অ্যান্টিবায়োটিক, যা লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করছে। তাদের এই অসাধারণ আবিষ্কারের জন্য ২০০৫ সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তারা।

এখনো বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে ‘এইচ. পাইলোরি’। সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিন’-এর গবেষকরা এক নতুন প্রশ্ন তুলেছেন, মানুষের মলের নমুনায় ‘এইচ. পাইলোরি’ পরীক্ষা কী এমন ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে যারা পেটের ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন?

তাদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘জামা’তে। এ গবেষণায় গবেষকরা খতিয়ে দেখেছেন, ‘এইচ. পাইলোরি’র জন্য ‘এইচপিএসএ’ নামে পরিচিত মলের পরীক্ষা ‘এফআইটি’ নামের সাধারণ কোলন ক্যানসার পরীক্ষার সঙ্গে একত্র করলে ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের ফল উন্নত হতে পারে কি না।

পেটের ক্যানসার ‘গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার’ হিসেবেও পরিচিত, যা পশ্চিমা দেশে কম দেখা যায়। তবে এশিয়ায়, বিশেষ করে জাপান ও তাইওয়ানে এখনো গুরুতর সমস্যা এটি। বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ ‘এইচ. পাইলোরি’ সংক্রান্ত পেটের ক্যানসার। প্রতি বছর প্রায় আট লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন।

বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, প্রায় ৯০ শতাংশ পেটের ক্যানসারের ঘটনা ‘এইচ. পাইলোরি’ সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত। ‘এইচ. পাইলোরি’কে ‘ক্লাস ১ কার্সিনোজেন’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যার মানে ক্যানসার তৈরি করতে পারে এমন শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে এ ব্যাকটেরিয়ার।

৫০ থেকে ৬৯ বছর বয়সী দেড় লাখেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর গবেষণা চালিয়েছে ড. ই-চিয়া লির নেতৃত্বে তাইওয়ানের গবেষণা দলটি। গবেষণায় প্রায় ৬৩ হাজার মানুষ এইচপিএসএ ও এফআইটি উভয় পরীক্ষাই করেছেন তারা, যেখানে প্রায় ৮৯ হাজার জনের কেবল এফআইটি পরীক্ষা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, ‘এইচ. পাইলোরি’ জটিল এক ব্যাকটেরিয়া, যা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষকে সংক্রমিত করে। তবে তাদের অধিকাংশই কখনো অসুস্থ হন না। কারণ, কারো আলসার বা ক্যানসার হয় কি নাÑ তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, যেমন জিনগত, খাদ্যাভ্যাস ও পরিবেশ ইত্যাদির ওপর।

এ ব্যাকটেরিয়া ‘ইউরেজ’ নামের এনজাইম তৈরি করে, যা পেটে কম অম্লীয় পরিবেশ তৈরি করে এদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি ও পেটের আস্তরণের ক্ষতি করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

বেশির ভাগ সময় ‘এইচ. পাইলোরি’ সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক ও ‘প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার’ বা পিপিআই নামের ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করেন ডাক্তাররা। এসব ওষুধ পেটের অ্যাসিড কমিয়ে অ্যান্টিবায়োটিককে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ সক্ষমতা বা রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে। ফলে সাবধানে চিকিৎসা পদ্ধতি বেছে নিতে হয় ডাক্তারদের।

গবেষকরা বলেছেন, স্ক্রিনিং উন্নত করতে ও কারা এ ক্যানসারে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন তা বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!