জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে পুঁজি করে নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে কেউ যেন অভ্যুত্থানের ‘চেতনার একক মালিকানা’ দাবি না করে, সে বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। যারা এই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান নিয়ে ‘চেতনা ব্যবসা’ করবে, তাদের পরিণতি ‘শুভ’ হবে না বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের সেই দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে রক্তের সিঁড়ি বানাতে বানাতে সেই জায়গায় গিয়ে ছাত্র-গণঅভ্যত্থান সৃজিত হয়েছে। এই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান শুধু ৩৬ দিনের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা হয় নাই।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের টানা শাসনের ইতি ঘটে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে কয়েক ডজন নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তার মধ্যে অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)।
আওয়ামী লীগের দেড় দশকে বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সে জন্য যারা জুলাই-আগস্টের চেতনার কথা বলেন, সবার কাছে অনুরোধ থাকবে, আওয়ামী লীগ ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে একক ‘ঠিকাদারি’ নিয়ে চেতনার ব্যবসা করতে করতে বিলুপ্তপ্রায় হয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে যারা রাজনৈতিকভাবে, রাজনৈতিক ব্যবসা করার কোনো রকমের মানসিকতা লালন করেন, তাদের অনুরোধ করবÑ এই জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের, এই অনুপ্রেরণা, এই ধারাবাহিকতা, এই ইতিহাস, এই চেতনা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের, যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। সুতরাং কেউ যেন রাজনৈতিক দল সৃজন করে জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের চেতনার একক মালিকানা দাবি না করে। রাজনৈতিকভাবে চেতনার ব্যবসা যারাই করে, তাদের পরিণতি শুভ হয় না।’
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক’ দাবি করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সারা পৃথিবী জানে, সারা বাংলাদেশের মানুষ জানে, কিন্তু মিথ্যা একটি ‘টেলিগ্রাফিক মেসেজের’ বরাত দিয়ে (স্বাধীনতার ঘোষণা বিষয়ে) শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা সেই ‘টেলিগ্রাফিক মেসেজের’ বয়ান সংবিধানের তপশিলে ধারণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে তাদের মিথ্যার রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করতে চেয়েছিলেন, সেটা ধোপে টিকে নাই।”
আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির চর্চাই ছিল মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে, গণতন্ত্রহীনতার রাজনীতি। বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস, ফ্যাসিবাদ কায়েমের ইতিহাস, একদলীয় শাসনব্যবস্থা একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমের ইতিহাস। নতুন কিছু নয়।’
২০২৪-এর জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী বাকশালী ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তিকে বিতাড়িত করতে পেরেছি এটা সত্য মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শক্তির মাফিয়া শক্তির মূলোৎপাটন এখনো পর্যন্ত বাকি আছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন