যশোরের কেশবপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক বহিষ্কৃত যুবদল নেতা ওয়ালিউর রহমান উজ্জলের (৪০) মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। উজ্জল কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল গ্রামের নাজির হোসেন বিশ্বাসের ছেলে। তিনি কেশবপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। নিহতের স্ত্রী ও স্বজনদের অভিযোগ, যৌথ বাহিনীর নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে উজ্জলের মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আটক করেন। তারা হলেনÑ কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি নরেন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ (৪০) ও তার ভাই আলমগীর ওরফে আলম (৩৫), আলতাপোল গ্রামের নাজির বিশ্বাসের ছেলে ওয়ালিউর রহমান উজ্জল (৪০) ও নতুন মূলগ্রামের মফিজুর রহমানের ছেলে রাসেল (৩০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার সকালে আটককৃতদের কেশবপুর থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়। পুলিশ শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে তাদের জেলহাজতে পাঠায়।
নিহতের স্ত্রী ফারজানা আক্তার ফারিহা জানান, ঘটনার রাতে উজ্জল বাড়িতেই ছিলেন। রাত দুইটার দিকে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা এসে তাকে আটক করেন। এরপর রশি দিয়ে হাত বেঁধে ও মুখের মধ্যে রড ভরে মারধর করেন। এভাবে রাত আড়াইটা থেকে ফজরের আগ পর্যন্ত তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে তার স্বামী মারা গেছেন বলে অভিযোগ।
নিহতের ভাবি কবিতা খাতুন জানান, পরিবারের সদস্যদের ঘরে আটকে রেখে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ইচ্ছামতো উজ্জলকে মারধর করেছে। নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়লেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। উজ্জলকে আটকের সময় তার কাছে অস্ত্র ছিল না। তাকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।
নিহতের বড় ভাই কেশবপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফজাল হোসেন বাবু জানান, যৌথ বাহিনীর সদস্যদের অমানবিক নির্যাতন ও সঠিক সময়ে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তার ভাই উজ্জলের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার সঠিক তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
কেশবপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও ৬০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক হয় উজ্জলসহ ৪ জন। শুক্রবার সকালে যৌথ বাহিনী তাদের পুলিশে হস্তান্তর করে। পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। অস্ত্র ও মাদক মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। শনিবার সকালে জানতে পারি উজ্জল মারা গেছেন।
যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবিদ আহমেদ জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উজ্জলকে কারাগারে আনা হয়। সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার নথিতে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন এমন একটি এমসি মেডিকেল সার্টিফিকেট ছিল।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. বিচিত্র মল্লিক জানান, উজ্জলকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনেন কারারক্ষী আনিচুর রহমান। মারধরের শিকার হয়ে তিনি কারাগারে এসেছেন এমনটা জানানো হয়। পরে মৃতদেহ মর্গে পাঠানো হয়।
যশোরের পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম জানান, উজ্জলের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, উজ্জল কেশবপুর পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বহিষ্কৃত। হেফাজতে তার মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন