বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০১:৪৯ এএম

অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন

অতিথি পাখির আগমন হ্রাসের বড় কারণ

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৫, ০১:৪৯ এএম

অতিথি পাখির আগমন  হ্রাসের বড় কারণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় ‘পাখির স্বর্গ’। প্রতি বছর শীতের শুরুতে হাজারো অতিথি পাখির আগমনে মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক ও জলাভূমিগুলো। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই আগমন ক্রমেই কমে আসছে। কেন এই হ্রাস? এ বিষয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম প্রান্তিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেদওয়ান আহাম্মেদ সাগর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি পাখির আগমন কমে যাওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?

‘বাংলাদেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও গত দুই দশক ধরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নতুন আবাসিক ও একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রয়োজনীয় হলেও এসব উন্নয়ন কার্যক্রম নির্দিষ্ট কোনো মাস্টারপ্ল্যান বা অগ্রাধিকারভিত্তিক পরিকল্পনা অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে না।

প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুন্দর পরিবেশভিত্তিক মাস্টারপ্ল্যান ছিল। কিন্তু পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েও এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারেনি।

বাংলাদেশের জলাভূমি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক চুক্তি (জধসংধৎ ঈড়হাবহঃরড়হ) অনুসরণ করেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক জলাভূমি ও সৌন্দর্য রক্ষা করতে পারছি না। রাজনৈতিক প্রভাব ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে এই পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

ফলে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেÑ যা তাদের আগমন হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। শুধু মানুষের কোলাহল নয়, লেকে আক্রমণাত্মক প্রজাতির বৃদ্ধি, অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান থেকে সৃষ্ট টক্সিক শৈবাল (ঃড়ীরপ ধষমধব) ও দূষিত পানি পাখিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এমন টক্সিনযুক্ত পরিবেশে তারা স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারে না।’

অতিথি পাখির সংখ্যা হ্রাসের আরও কী কী কারণ আপনি দেখছেন?

‘অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত জনসমাগম ও আন্তর্জাতিক বায়ুদূষণ বড় ভূমিকা রাখছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর, বিশেষ করে ভারত ও চীনের শিল্পাঞ্চল থেকে নির্গত দূষিত বায়ু আমাদের আকাশেও প্রভাব ফেলছে।

এ দূষণের কারণে পাখিদের উড়ালপথে দৃশ্যমানতা কমে যায়, ফলে তাদের নিরাপদে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া শীতকালে ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় ও কোলাহল পাখিদের জন্য অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তারতম্যও তাদের প্রজনন ও বিশ্রামের অনুকূল পরিবেশ নষ্ট করছে।’

বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় পাখি শিকারের অভিযোগ রয়েছে। করণীয় কী হতে পারে?

‘আমাদের প্রস্তাব হলোÑ বোটানিক্যাল গার্ডেন, মনপুরা ও সংলগ্ন এলাকাকে সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক। সেখানে কেবল গবেষণা ও শিক্ষার উদ্দেশ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার থাকবে। বহিরাগতদের প্রবেশ সীমিত করা দরকার, যাতে পাখিদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তা বজায় থাকে।

এ ছাড়া ওই এলাকাকে ঘিরে একটি ‘ন্যাচারাল বা স্পেশাল জোন’ তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বের বাইরে কেউ যেতে পারবে না। এতে অতিথি পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত হবে।’

অতিথি পাখি সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরিতে গবেষকরা কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন?

‘অতিথি পাখি সংরক্ষণে গবেষণার পরিধি আরও বিস্তৃত করতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি পাখিদের পরাগায়নে জীবাণু প্রবাহ কিংবা পাখির মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়েও গবেষণা করা দরকারÑ যা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয়ের ওপর প্রভাব ফেলে।

যদি আমরা পাখিদের আগমন, অবস্থান ও প্রজননচক্র নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন তৈরি করতে পারি, তবে তা ভবিষ্যতের সংরক্ষণ নীতিমালা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় জনসচেতনতা কীভাবে বাড়ানো যায়?

‘গবেষণার ক্ষেত্র বাড়াতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণায় অংশ নেয়Ñ যা বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান তৈরি করে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা গবেষণার মাধ্যমে যেমন দক্ষতা অর্জন করবে, তেমনি নিজেরাই পরিবেশ রক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারবে। আমি সবসময় বলিÑ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের সবচেয়ে মেধাবী তরুণ প্রজন্মের অংশ। তাদের গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা গেলে তারা শুধু প্রকৃতি নয়, দেশের ভবিষ্যৎও রক্ষা করতে পারবে।’

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!