ঢাকাই সিনেমার সুযোগসন্ধানী নায়িকা হিসেবে বেশ পরিচিত অপু বিশ্বাস। সবসময় স্রোতের জোয়ারে গা ভাসাতে ভালোবাসেন তিনি। চলচ্চিত্রপাড়ায় চাউর রয়েছে যেখানে নিজের লাভ আছে, সেখানে পাওয়া যায় অপু বিশ্বাসকে। তার প্রমাণও পাওয়া গেছে বহুবার। আবার সুযোগ বুঝে সুর পাল্টাতেও বেশ পারদর্শী এই নায়িকা।
তার প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি অপুর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে। শেখ হাসিনার গুণগান গাওয়া থেকে শুরু করে ‘ডামি’ ভোটের সমর্থন দিয়ে শুধু রাজপথেই সরব থাকেননি অপু, সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার জন্য বেশ দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন তিনি। কিনেছিলেন মনোনয়ন ফরম। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে এই চিত্রনায়িকা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন।
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে সেসময় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অপু বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘মনোনয়ন পেলে নারীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। সবাই জানেন, আমি মনে-প্রাণে আওয়ামী লীগ ধারণ করি। সে কারণেই সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন চাই। আমার বিশ্বাস, এই দায়িত্ব পালন করার মতো যোগ্যতা আমার আছে।’
এখানেই শেষ নয়, সাবেক সংসদ সদস্য-চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদের নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায় অপুকে। এমনকি আওয়ামী লীগের জয়ে বিভিন্ন সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান অপু। সবসময় ঈশ্বরের কাছে শেখ হাসিনার জন্য প্রার্থনা করেন বলেও এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন।
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দালাল শিল্পীদের মধ্যে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস অন্যতম বলে শোবিজে প্রচলিত রয়েছে। হাসিনা সরকার পতনের আগে অপু বিশ্বাস মাত্র ১০০ টাকা পারিশ্রমিকে সালমান হায়দার পরিচালিতব্য ‘শেখ রাসেলের আর্তনাদ’ নামে একটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। সিনেমাটিতে শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল তার। চরিত্রের নাম হাসু।
সিনেমাটিতে চুক্তির পরপরই অপু বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘সিনেমার গল্প শুনে একবাক্যে রাজি হয়ে যাই। ঐতিহাসিক এই সিনেমার অংশ হতে পেরে ভালো লাগছে। আশা করি, কাজটি দারুণ হবে।’ এখন তিনি সুর পাল্টে বলছেন, ‘সিনেমাটিতে তিনি আর নেই। অনেক আগেই কাজটি থেকে সরে এসেছেন।’ তবে হাসিনা সরকার পতনের পর সরে আসার কথা জানান তিনি।
রাজনীতিতে নতুন নয় বলে এই প্রতিবেদককে অপু বিশ্বাস গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিলেন। আরও পাঁচ বছর আগে থেকেই এই জায়গা নিয়ে কাজ করছেন বলে সেসময় জানান তিনি। ২০১৯ সালে এই নায়িকা জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু সে বার তার ভাগ্য সহায় হয়নি। তবে সর্বশেষ শেখ হাসিনার ‘ডামি’ ভোটে সংরক্ষিত নারী আসনে আশাবাদী ছিলেন তিনি। কিন্তু এবারও ছিটতে যেতে দেখা যায় তাকে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সুর বদল করেন অপু বিশ্বাস। সম্প্রতি গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করিনি। আমি রাজনীতি বুঝি না, রাজনীতি করিও না। আমি অভিনয়শিল্পী, পাশাপাশি ব্যবসা করছি। সেটা নিয়েই থাকতে চাই।’
অপুর এমন বক্তব্যে অবাক অনেকেই। এরপর তার পুরোনো কিছু ভিডিও ক্লিপ নেট দুনিয়ায় তুমুল ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নৌকা ও শেখ হাসিনার জন্য ভোট চাচ্ছেন অপু বিশ্বাস। নিজেকে নৌকার লোকও দাবি করেছিলেন তিনি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ চর্চা হচ্ছে।
অনেকেই এখন বলছেন, অপু বিশ্বাস সুযোগসন্ধানী। স্বার্থ ছাড়া এক পা আগায় না। তার প্রমাণ তো অনেকবার মিলেছে। আরও একবার পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন তিনি। বিভিন্ন সময় নৌকার প্রচারণায় এবং শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা গেছে। কিন্তু হাসিনা সরকার পতনের পর এখন সুর পাল্টে নিজেকে অরাজনৈতিক দাবি করছেন অপু বিশ্বাস।
এদিকে, অনেক দিন ধরেই নতুন সিনেমার খবরে নেই অপু বিশ্বাস। তার অভিনীত সর্বশেষ সিনেমাগুলো হয়েছে সুপারফ্লাপ। এখন মূলত ব্যবসা ও বিভিন্ন শো রুম উদ্বোধনে দেখা যায় অপুকে। আর ব্যক্তিজীবনে শাকিবকে কেন্দ্র করে অপু-বুবলীর ভার্চুয়াল যুদ্ধ কারোই অজানা নয়।
অভিনয়ের ব্যস্ততা জানতে চাইলে অপু বিশ্বাস বলেন, ‘এখন ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। সামনে বেশকিছু ব্র্যান্ডের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করব। তা ছাড়া ফটোশুট নিয়েও ব্যস্ততা যাচ্ছে। আমার হাতে বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্য আছে। সেগুলো পড়ছি। তবে এখনো কোনো সিনেমা পাকাপাকি করিনি। কারণ মানসম্পন্ন সিনেমা ছাড়া আসলে কাজ করতে চাচ্ছি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দালাল শিল্পী হিসেবে পরিচিত অপু বিশ্বাসকে নিয়ে এখন আর কাজ করতে চান না প্রযোজক ও পরিচালকরা। এরই মধ্যে হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন অপু। যে কারণে সাবেক জনপ্রিয় এই নায়িকা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন প্রযোজক ও পরিচালকরা।
মাঝে নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নাটক নির্মাণের কথা থাকলেও এখন আর তার অগ্রগতি নেই। নাটক নির্মাণের জন্য অগ্রিম টাকা নিয়েও এক পরিচালক অপুকে টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন সরকার পতনের পর। তাকে নিয়ে এখন আর তিনি কাজ করতে চান না বলে রূপালী বাংলাদেশ নিশ্চিত হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :