বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুল মোমিন, সাতক্ষীরা 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:০৬ এএম

ঐতিহ্যের মাদুরশিল্প বিলুপ্তির পথে

আব্দুল মোমিন, সাতক্ষীরা 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:০৬ এএম

ঐতিহ্যের মাদুরশিল্প বিলুপ্তির পথে

একসময় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাদুরের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই মাদুর দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হতো। তবে কাঁচামালের অভাব আর প্লাস্টিকের মাদুর বাজারে আসায় চরম সংকটে পড়েছে এই কুটির শিল্প। এ ছাড়া উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শিল্পীরা এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন।

দুই দশক আগেও তালার মাদুরশিল্পের ছিল রমরমা বাণিজ্য। উপজেলার বাতুয়াডাঙ্গা, মাদরা, কলাগাছি গ্রামের উঠোনে ছিল মাদুর বোনার মহোৎসব। তবে প্রত্যন্ত গ্রামের কিছু হাতে এখনো সে গল্প জ্যান্ত আছে। অনেকেই টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তাদের পেশা। 

সরেজমিন দেখা গেছে, তালার বাতুয়াডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ মঞ্জুরি রানী সরকার মাদুর তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্বামী পীযূষ সরকারকে নিয়ে মাদুর বুনেই চলে তার সংসার। তাদের নেই জমিজমা, নেই সরকারি কোনো বিশেষ সুবিধা।

মঞ্জুরি রানী বলেন, মাদুরই আমাদের জীবন। যেদিন মাদুর বুনতে পারি না সেদিন মনে হয়, পেটের ক্ষুধাটা যেন আরও বেড়ে যায়। একটা মাদুর বানাতে এক দিন লেগে যায়। ছোট মাদুর বিক্রি করি ৩০০ টাকায়, বড়টা ৪০০ টাকায়। খরচ বাদ দিলে বর্তমানে হাতে তেমন কিছুই থাকে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাদুরশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করছে ‘মুক্তি ফাউন্ডেশন’ নামের তালার একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা কিছু মূলধন দিয়ে থাকে, যার মাধ্যমে গরিব কারিগররা আবারও বুনন শুরু করেছেন। তবে কাঁচামাল ও বাজারে চাহিদা তেমন না থাকায় উৎপাদন বাড়ানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে হাটে-বাজারে মাদুরের কদর ছিল। এখন সেখানে রেক্সিন, প্লাস্টিকের ম্যাট এসে সেই স্থান দখল কওে নিয়েছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

মঞ্জুরি রানীর স্বামী পীযূষ সরকার বলেন, দলুয়া, খলিসখালী, পাটকেলঘাটা, তালার হাটে আমি মাদুর বিক্রি করি। অনেক সময় বিক্রি হয়, আবার অনেক সময় পুরোটাই ফেরত নিয়ে আসতে হয়।

তিনি আরও বলেন, একসময় তালা উপজেলায় ২০০-৩০০ পরিবার মাদুর তৈরিতে নিয়োজিত ছিল, বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ২০-৩০টিতে। মাদুরের কাঁচামাল ‘মেলে’ চাষের পরিমাণ গত এক দশকে প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে। মাদুর তৈরি করে প্রতিটি পরিবার দৈনিক গড়ে ২০০-৩০০ টাকা আয় করে। 

খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান শেখ কামরুল ইসলাম লাল্টু জানান, আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মেলে চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। এটি টিকিয়ে রাখতে হলে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে মেলে চাষ পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

মুক্তি ফাউন্ডেশন পরিচালক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, মাদুরশিল্প টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করছে মুক্তি ফাউন্ডেশন। সংস্থার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মাদুর তৈরির জন্য উপজেলার ৫০টি পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রো টেকনোলজি বিভাগের একটি রিসার্চ টিমের সহযোগিতায় মেলে চাষের জন্য ৫০টি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করা হয়েছে। এ কাজে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিটি প্লটের জন্য ১৫ হাজার টাকা করে সহায়তা করা হচ্ছে।

তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা খাতুন বলেন, মাদুর তৈরির মূল কাঁচামাল মেলে একসময় এই এলাকায় ব্যাপক চাষ হতো। কৃষকেরা বর্ষা মৌসুমে মেলে লাগাতেন, আর শুষ্ক মৌসুমে তা শুকিয়ে ঘরে তুলতেন। তারপর শুরু হতো মাদুর বোনা। মেলে চাষে সময় লাগে কম, খরচও ছিল কম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অনিয়মিত বৃষ্টি ও নদীভাঙন অনেক চাষিকে মেলে চাষে নিরুৎসাহিত করেছে। বর্তমানে মেলে চাষ প্রায় বিলুপ্ত।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!