রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ এবং সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। খসড়া তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে ২৬০ জন ভোটারের নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া আইবিএ শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে নির্বাচনে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ পেলে বিষয়টি সামনে আসে। চূড়ান্ত তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৮৯২। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৫ হাজার ৩৫১ ও ছাত্রী ভোটার ৯ হাজার ৭৪১ জন।
গত মঙ্গলবার রাতে রাকসুর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-এর তপশিল মোতাবেক অদ্য ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হলো। রাকসুর ওয়েবসাইট-এ (যঃঃঢ়ং/িি/.িৎঁ.ধপ.নফ/ৎঁপংঁ/) এবং সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলসমূহে নোটিশ বোর্ডে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা পাওয়া যাবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় কোনো ধরনের ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে নির্বাচন কমিশন তা সংশোধন করার অধিকার সংরক্ষণ করে।’
কোন হলে কত ভোটার: ছাত্রহলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা ফজলুল হক হলে ভোটার সংখ্যা ৮২৮। শাহ্ মখ্দুম হলে ১ হাজার ১৭০ জন। নবাব আব্দুল লতিফ হলে ৯৬০ জন। আমীর আলী হলে ১ হাজার ১২৯ জন। শহীদ শামসুজ্জোহা হলে ১ হাজার ১৮৮ জন। শহীদ হবিবুর রহমান হলে ২ হাজার ৮৮ জন। মতিহার হলে ১ হাজার ৫৮৩ জন। মাদার বখ্শ হলে ১ হাজার ৫৯০ জন। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ১ হাজার ৫৬১ জন। বিজয়-২৪ হলে ১ হাজার ২৮৩ জন। এছাড়া শহীদ জিয়াউর রহমান হলে ১ হাজার ৯৭১ জন ভোটার চূড়ান্ত তালিকায় আছেন।
ছাত্রীহলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলে ২ হাজার ৩৫ জন। রোকেয়া হলে ১ হাজার ৮২২ জন। তাপসী রাবেয়া হলে ১ হাজার ৪৭ জন। বেগম খালেদা জিয়া হলে ১ হাজার ১৩৪ জন। রহমতুন্নেসা হলে ১ হাজার ৫৫৫ জন। এছাড়া জুলাই-৩৬ হলে ২ হাজার ১৪৮ জন ছাত্রী চূড়ান্ত ভোটার হয়েছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা এবং ভোটাধিকারকে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করায় তাদের এই প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাকসু নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আমজাদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাই তাদের ভোটাধিকারও নেই। জাতীয় পর্যায়ে ভোট দেওয়ার অধিকার না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও তারা ভোট দিতে পারবে না।’
রাকসুর গঠনতন্ত্রে এ-সংক্রান্ত কোনো আইন উল্লেখ আছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদিও বিষয়টি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্রে সরাসরি উল্লেখ নেই, কিন্তু ভোটাধিকার একটি নাগরিক অধিকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই একই নিয়ম অনুসরণ করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে।’
এর আগে গত ৬ আগস্ট রাকসু নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এ নিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন পুনরায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিল।
এ বিষয়ে নেপালি শিক্ষার্থী সুমিত শর্মা বলেন, ‘আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আমাদের একজন প্রতিনিধি থাকা উচিত, যিনি বিদেশি শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে এবং আমার এই ভাবনার কারণে কেউ কেউ আমার প্রতি বিরূপ মনোভাবও দেখায়। তখন আমি বিষয়টি নিয়ে আর অগ্রসর হইনি। এখন যেহেতু আমাদের ভোটাধিকার থাকছে না, তাই আর কিছু করার নেই। তবে আমাদের ভোটাধিকার থাকলে পছন্দের কোনো বাংলাদেশি প্রার্থীকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পেতাম।’
এ ছাড়া, এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচনের আচরণবিধির অনুচ্ছেদ ৫-এর ব্যাখ্যা ও সংশোধন দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন ২০২৫-এর আচরণবিধির অনুচ্ছেদ-৫-এ বিদ্যমান শর্তের সংশোধনী নি¤েœ উল্লেখ করা হলো, ‘ছাত্রদের আবাসিক হলে ছাত্রী এবং ছাত্রীদের আবাসিক হলে ছাত্র প্রবেশ সংক্রান্ত’ শিরোনামে যা বোঝানো হয়েছে তা হলো, নির্বাচনি প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রার্থীগণ (রাকসু ও সিনেট-এ ছাত্র প্রতিনিধি) সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের রিটার্নিং অফিসারের পূর্বানুমতি নিয়ে নির্ধারিত সময় ও স্থানে আবাসিক হলে শুধু পরিচিতি সভায় ছাত্রদের আবাসিক হলে ছাত্রী প্রার্থী এবং ছাত্রীদের আবাসিক হলে ছাত্র প্রার্থী প্রবেশ করতে পারবে।”