গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জামালপুরের আল আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির পরিচালকদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মাদারগঞ্জ আল আকাবা সমবায় সমিতির পরিচালক ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাদারগঞ্জ থানায় মামলা করেছে সিআইডি। তিনি আরও বলেন, মাদারগঞ্জ থানায় সমবায় কার্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে গড়ে ওঠা এই সমিতির ব্যানারে পরিচালনা করা হতো ব্যাংকিং কার্যক্রম। এই সমিতি জামালপুর জেলার বিভিন্ন থানা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করত। ব্যাংকের চেয়ে বেশি হারে মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১৩-১৪ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে। প্রতি লাখে মাসে ১২০০-১৫০০ টাকার মুনাফার কথা বলে অর্থ সংগ্রহ করে শুরুতে সীমিত পরিসরে লাভ দিলেও পরে তা বন্ধ করে দিয়ে সমিতির মালিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস তালাবদ্ধ করে গা-ঢাকা দেন।
সিআইডির অনুসন্ধানকালীন জানা যায়, ১৩-১৪ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে সমিতির পরিচালকেরা তাদের নিজ নিজ নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে ওই অর্থে ৩১১৩ শতাংশ সম্পত্তি কেনেন। এসব সম্পত্তির মধ্যে জামালপুর জেলার সদর থানাধীন গহেরপাড়া মৌজায় প্রায় ১৫ একর জমির ওপর আলফা অটো ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা, গাজীপুর দক্ষিণ সালনা মৌজায় প্রায় ৩৫০ শতাংশ জমির ওপর আলফা ড্রেসওয়্যার নামে একটি গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। তা ছাড়া আলফা ডেভেলপার, আলফা ড্রেসওয়্যারের নামে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে ৯টি প্লট রয়েছে। বাকি সম্পত্তিগুলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও জামালপুর জেলাসমূহের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে।
মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামালপুরের সিনিয়র স্পেশাল জজ এসব ভূসম্পত্তির স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অবকাঠামোর ওপর ক্রোকাদেশ দেন বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া, ইতিপূর্বে অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিদেশ গমনাগমন রোধের জন্য আদালত আদেশ দেন। নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান সিআইডি কর্মকর্তা।