জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে যে সুপারিশ আছে, তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব কেবল অন্তর্বর্তী সরকারের নয়; শুধু আমলাদেরও নয়। এ জন্য সাংবাদিকদেরই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। অধ্যাপক আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, পেশাটি আপনার, দেশটিও আপনার। কাজেই নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে নিজেদেরই প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল রোববার সকালে ‘প্রস্তাবিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনের এ এস মাহমুদ সেমিনার কক্ষে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিজেসির চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেসির নির্বাহী মিলটন আনোয়ার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বিজেসি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের কাছে তাদের আট দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেছিল। পরে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বিজেসির বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক সুপারিশ রয়েছে, যা এখনই বাস্তবায়নযোগ্য। কিন্তু ২২ মার্চ গণমাধ্যম কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের সংস্কার প্রতিবেদন জমা দিলেও এখনো কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সম্প্রচার মাধ্যমের তদারকির জন্য আলাদা জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল বিজেসি। এ ছাড়া তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে সম্প্রচার মাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকদের সংজ্ঞা নির্ধারণ, তাদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ ও সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য আলাদা বেতনকাঠামো করা, সম্প্রচার মাধ্যমকে শিল্প ঘোষণা, পেশাগত সুরক্ষার জন্য পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত আইন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জন্য আলাদা নীতিমালা করা ইত্যাদি। গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হলেও ঐকমত্য কমিশনের ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে অন্তর্ভুক্ত না করায় সমালোচনা করা হয়।
মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রজ্ঞাপনের মধ্যমে ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়েছিল ১২ ফেব্রুয়ারি। তখন ১১টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে ৬টি তাদের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছিল। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন দিয়েছিল ২৫ মার্চ। এদিকে সংস্কারের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার লক্ষ্য থাকায় নতুন করে বাকি পাঁচটি কমিশনকে ঐকমত্য কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। তবে তার অর্থ এই নয়, তাদের কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কমিশনের প্রতিবেদনই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘যে দেশে নাগরিকদের সুরক্ষা নেই; নাগরিকেরা গুম, অপহরণ ও হত্যার শিকার হন, সেখানে শুধু সাংবাদিকদের সুরক্ষা কী করে থাকতে পারে! আমাদের দেশের পুলিশ যখন জাতিসংঘের প্রতিনিধি হয়ে নাইরোবি বা অন্য কোনো দেশে কাজ করতে যায়, তখন তারা জাতিসংঘের কোড অব কনডাক্ট (আচরণবিধি) অনুসরণ করে। বিক্ষোভ দমন করার সময় তারা বিক্ষোভকারীদের নির্যাতন করে না। কিন্তু ঢাকায় তারা বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে বল প্রয়োগ করে। সেখানে কর্মরত সাংবাদিকও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নির্যাতিত হন।’
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘মূল সমস্যা হলো আমাদের পুলিশ চলছে ব্রিটিশ আমলের আইনে। সেই আইনের পরিবর্তন দরকার। আইন পরিবর্তন হলে পুলিশ কাউকে নির্যাতন করতে পারবে না। তখন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরাও আর নির্যাতিত হবেন না। সমস্যাগুলোকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে।’
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘বলা হয়েছে গণমাধ্যমের মালিকেরা সাংবাদিকদের ঠিকমতো বেতন দেন না; কারণ, প্রতিষ্ঠান লাভজনক হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান যদি লাভজনকই না হয়, তবে বছর বছর তারা টিকিয়ে রেখেছেন কেন? নিশ্চয় অন্য কোনোভাবে তারা সুবিধা ভোগ করেন। অন্য কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্রমাগত লোকসান দিয়ে গেলে তো মালিকেরা তা বন্ধ করে দেন।’
মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন, বিজেসির সদস্য সচিব ইলিয়াস হোসেন। আরও বক্তব্য দেন বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের এ দেশীয় পরিচালক মো. আল মামুন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম, যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিনহাজউদ্দিন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসনাইন খুরশেদ, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সহসভাপতি অনিমা সুলতানা, বিজেসির ট্রাস্টি তালাত মামুন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিজেসির নির্বাহী শাহনাজ শারমীন।
 

 
                             
                                     সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন