সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৫:৩০ এএম

দেশে প্রথম রোবটিক রিহ্যাব সেন্টার চালু 

স্নায়বিক রোগে ‘আশার আলো’

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৫:৩০ এএম

রিহ্যাব সেন্টার

রিহ্যাব সেন্টার

বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটির (বিএমইউ) ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধীনে দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন সরকারের সহায়তায় নির্মিত এই পূর্ণাঙ্গ রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম সেন্টার, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং স্নায়বিক জটিলতায় ভোগা অসংখ্য মানুষের জীবনে আশার আলো হয়ে উঠবে। তবে শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের সব জেলা শহরেও এই চিকিৎসা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।

তিনি বলেছেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন, তখন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল রংপুরে নির্মাণের বিষয়ও রয়েছে। সেই সফরে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য মাত্র ১০-১২টি রোবট চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু চীন আমাদের ৫৭টি রোবট উপহার দিয়েছে, যা সত্যিই অপ্রত্যাশিত। একই সঙ্গে ২৯ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণও দিয়েছে তারা। এটি প্রমাণ করে বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক কতটা গভীর ও সহযোগিতামূলক।

গতকাল রোববার বিএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলমের সভাপতিত্বে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের লেকচার গ্যালারিতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নূরজাহান বেগম।

এ সময় নূরজাহান বেগম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানসহ দেশের বড় বড় দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় চীনের এই সহায়তা আমাদের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই রোবটিক সেন্টার যেন শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, এ বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের দেশের ভালো হাসপাতালগুলো ঢাকায় কেন্দ্রীভূত। জেলাগুলোতে অনেক সময় দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের ঢাকায় নিয়ে আসতে হয়। এতে রোগী ও তাদের পরিবার দু’পক্ষই মানসিক ও আর্থিকভাবে কষ্ট পায়। আমরা চাই ৩-৪টি রোবটিক চিকিৎসা ব্যবস্থা জেলা পর্যায়েও চালু করতে, যাতে মানুষকে আর কষ্ট করে ঢাকায় আসতে না হয়। কারো হাত বা পা অকেজো হয়ে গেলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। আমরা সেই অসহায়ত্ব থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে কাজ করছি।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা চাই, বিএমইউ প্রযুক্তি স্থানান্তরের একটি কেন্দ্র হয়ে উঠুক। উন্নত বিশ্বে যে চিকিৎসা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি দ্রুত বাংলাদেশে পৌঁছাতে হলে বিএমইউকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, বিএমইউ একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। তারা সব সময় নতুনত্ব নিয়ে কাজ করে। এই রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের মাধ্যমে তারা রোগীদের বিশেষায়িত সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।

বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু উল্লেখ করে এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন অনুষ্ঠানে বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তিÑ যেকোনো খাতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে চীন। এই রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার সেই সহযোগিতার প্রতীক। আমরা চাই, ভবিষ্যতেও এ ধরনের প্রকল্প একসঙ্গে বাস্তবায়ন করতে। 

ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম এ শাকুর বলেন, এই সেন্টার ইতিমধ্যে জুলাই মাসের আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি স্ট্রোক ও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রোগী এবং যাদের দীর্ঘ মেয়াদে থেরাপি প্রয়োজনÑ তাদের জন্য এই সেন্টার হবে আশীর্বাদস্বরূপ। বিশেষ করে যারা হাত-পায়ের সূক্ষ্ম কাজের সক্ষমতা হারিয়েছেন, এআই-নির্ভর রোবটের মাধ্যমে তাদের সেই ক্ষমতা পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে।

অনুষ্ঠান শেষে সেন্টার পরিচালনায় প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। এর আগে লেকচার গ্যালারিতে প্রজেক্টরের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি প্রদর্শন করা হয়।

২৯ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে চীনে প্রশিক্ষণ: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ৫ আগস্টের পর এত আহত মানুষকে কীভাবে সুস্থ করা হবে তা আমরা বুঝতে পারছিলাম না। তখন বিদেশে রোবটিক চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হচ্ছিল। পরে আমরা চিন্তা-ভাবনা করেছি, যদি আমরা দেশের ভেতরেই আধুনিক রোবটিক যন্ত্রপাতি নিয়ে চিকিৎসা শুরু করি, তাহলে রোগীকে বিদেশে যেতে হবে না। সেই অনুযায়ী চীন থেকে আমরা ৫৭টি রোবট এনেছি। একই সঙ্গে আমাদের ২৯ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে চীনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে আমাদের দেশীয় চিকিৎসকরা নিজেই রোবট নিয়ন্ত্রণ করে রোগীদের সেবা দিতে পারবেন।

সেবার খরচ রোগীদের সামর্থ্যরে মধ্যে থাকবে:

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এই প্রযুক্তি দেশের মানুষের জন্য বড় এক উপকারে আসবে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত হয়ে যারা এখনো পঙ্গুত্বের সঙ্গে লড়ছে, তাদের জন্য বিনা মূল্যে রোবটিক চিকিৎসাসেবা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখন থেকে এই চিকিৎসা কার্যক্রম সাধারণ রোগীদের জন্যও উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেবার খরচ রোগীদের সামর্থ্যরে মধ্যে থাকবে। এটি দেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারের সুবিধা: বর্তমানে সেন্টারে রয়েছে মোট ৫৭টি উন্নতমানের রোবট, যার মধ্যে ২২টি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক। এসব রোবটের মাধ্যমে রোগীর শারীরিক সক্ষমতা উন্নয়ন, চলাফেরার ভারসাম্য বজায় রাখা, হাতের সূক্ষ্ম কাজের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার এবং ভার্চুয়াল সিমুলেশনভিত্তিক সাইকোলজিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন দেওয়া সম্ভব। চীনের সহায়তায়ে এরই মধ্যে ২৯ জন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

রোবটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্ট্রোকের রোগী, স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, জন্মগত বা অর্জিত পক্ষাঘাত, ফ্রোজেন শোল্ডার, নার্ভ ইনজুরি, দুর্ঘটনায় আহত ও পঙ্গু, জটিল অর্থোপেডিক কন্ডিশন, সেরিব্রাল পালসি, গিলিয়েন-ব্যারে সিনড্রোম এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথাজনিত বা বডি স্টিফনেসজনিত সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হবে। বক্তারা জানান, রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ে রোবটিক চিকিৎসা ছড়িয়ে গেলে দেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পেতে আরও স্বস্তি ও সুবিধা ভোগ করবে। এটি শুধু প্রযুক্তির অগ্রগতি নয়, বরং অসহায় মানুষের জন্য নতুন আশার আলো হিসেবে কাজ করবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!