ঢাকা শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ভর্তি ২৬৩

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে নতুন করে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। তবে একই সময়ে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬৩ রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুহীনতার খবর যদিও স্বস্তিদায়ক, তবু নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার ধারাবাহিকতা এখনো উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলতি অক্টোবর মাসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে শীতের আগে আরও বড় সংকট তৈরি হতে পারে।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সারা দেশে মোট ৪৮ হাজার ৪৯১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০২ জনে। 

মাসভিত্তিক রোগী ও মৃত্যুর চিত্র: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল গত সেপ্টেম্বর মাসে। ওই এক মাসেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৫ হাজার ৮৬৬ জন রোগী এবং মারা গেছে ৭৬ জন। সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড হয়, যা চলমান বছরের সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তোলে।

এদিকে, অক্টোবর মাসের মাত্র তিন দিনে ১ হাজার ১৪৯ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে চারজনের। অর্থাৎ, অক্টোবরের শুরু থেকেই রোগীর চাপ বেড়ে চলেছে।

তার আগে জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১০ হাজার ৬৮৪ জন রোগী এবং ওই মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের। জানুয়ারিতে ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬, এপ্রিলে ৭০১, মে মাসে ১ হাজার ৭৭৩, জুনে ৫ হাজার ৯৫১ এবং আগস্টে ১০ হাজার ৪৯৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

মৃত্যুর পরিসংখ্যান:

চলতি বছর জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত, মে মাসে তিন, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১, আগস্টে ৩৯ এবং সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ মাসে কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ডেঙ্গু পরিস্থিতির সার্বিক বিশ্লেষণ: পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি ছিল। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমের কারণে মশার প্রজনন বেড়ে যাওয়ায় এ সময়েই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বরে রোগী ও মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর অক্টোবরের শুরুতেও পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনতে এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি। এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, দ্রুত শনাক্তকরণ এবং সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা ছাড়া এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলছে, জ্বর দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। পাশাপাশি আশপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানি সরিয়ে ফেলতে হবে, যাতে এডিস মশার প্রজনন কমানো যায়।