ঢাকা রবিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৫

দাবি ফরহাদ মজহারের

মাজার হলো মিলনমেলা, গণতন্ত্রের আরেক  নামও মিলনমেলা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১২:২৩ এএম

‘মাজার হলো মিলনমেলা, গণতন্ত্রের আরেক নামও মিলনমেলা। যদি মিলনই না হয়, তাহলে গণতন্ত্র কীভাবে সম্ভব’-এ মন্তব্য করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর শাহ আলীর মাজারে শতবর্ষী বটগাছ কাটা এবং সারা দেশে মাজারে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি কাটা গাছের গোড়ায় অনুষ্ঠিত হয়।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা যারা মাজারের ভক্ত, আসিক, তারা জানি এখানে বরকত আছে, আল্লাহর রহমত নেমে আসে। আজ যে গাছ কাটা হয়েছে, এটা শুধু একটি গাছ নয়, এটা ছিল পাখি, প্রাণী, সাধক-পাগলদের আশ্রয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে মাজারের ইতিহাস, স্মৃতি, ভক্তি ও সাধনার ধারা।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এই গাছ কেটে আপনারা ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। এর বিচার হবে। সরকারের তিনজন উপদেষ্টা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের আশা-আকাক্সক্ষাকেও অসম্মান করা হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বন্ধুও গান-সংগীত বন্ধ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। অথচ আমরা সেই সাধনা আবার শুরু করেছিলাম। কেন তা বন্ধ করা হলো, তার জবাব মাজার কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে।’ 

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর উদ্দেশে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আপনার সেই শিল্পকলা একাডেমিতে আমার পাগলদের জায়গা নেই। যেহেতু ওখানে জায়গা নেই, ওটাকে আমি সংস্কৃতি মানি না।’ শাহ আলীর মাজারে শতবর্ষী বটগাছ যারা কেটেছে, তারা কিছুদিন পরে মাজার ভেঙে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করেন ফরহাদ মজহার। তাই তিনি প্রশাসনের কাছে মাজারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিবর্তনের দাবি জানান।

মাজারে থাকা ভক্তরা বলেন, গত বুধবার মাজার প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতবর্ষী বটগাছের অনেকগুলো ডালপালা কেটে ফেলা হয়। এতে তারা ক্ষোভ জানান। মাজার কমিটি বদল ও গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেন ফরহাদ মজহার।

সংবাদ সম্মেলনে কবি ও ফিল্ম মেকার মোহাম্মদ রোমেল বলেন, পির-মুর্শিদ, ফকির, দরবেশ, সাধু-সন্তদের মাজার, দরগাহ, দরবার, আখড়াÑ এসব কেবল ধর্মীয় ক্ষেত্র নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভক্তি ও ভালোবাসার আকুতি থেকেই মাজার গড়ে ওঠে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর একের পর এক মাজার ধ্বংসের ঘটনা ঘটছে। এতে দেশের আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি ও ইতিহাস ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। 

তিনি উল্লেখ করেন, শাহ আলী বোগদাদীর (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে শতবর্ষী বটগাছের ডাল কেটে দেওয়া হয়েছে। এর আগে সিন্নিগাছ নামে পরিচিত বটগাছের গোড়ায় মোমবাতি-আগরবাতি জ¦ালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, এ গাছের জন্ম হয়েছিল হযরত শাহ আলী বোগদাদীর ব্যবহৃত লাঠি থেকে। বহু ভক্ত এই গাছের নিচে মানত করতেন। বিকল্প ব্যবস্থা রাখা হলেও ভক্তরা এটিকে আধ্যাত্মিক চর্চার ওপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে কবি ফরহাদ মজহারসহ মাজারের পাগলদের নিয়ে ১০ মিনিটের জন্য মাজারের প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করেন।