ঢাকা কলেজে ‘শিক্ষকদের ওপর হামলার’ প্রতিবাদে সরকারি কলেজগুলোতে কর্মবিরতি পালন করেছেন শিক্ষক পদে নিয়োজিত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। পাশাপাশি কালোব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা। এ ছাড়াও প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫’ বাতিলের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ঘণ্টাখানেক বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নতুন এই আইন কার্যকর হলে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক বিভাগ বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে কলেজটির শতবর্ষী ঐতিহ্য হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলারও প্রতিবাদ জানায় তারা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার একাধিক সরকারি কলেজ ও শিক্ষার একাধিক দপ্তরে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা যায়। জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে ইডেন মহিলা কলেজেও কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। ক্লাস বন্ধ ছিল ঢাকা কলেজেও। এ ছাড়া মিরপুর বাঙলা কলেজ, কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, চট্টগ্রামের সরকারি সিটি কলেজ, শেরপুর সরকারি কলেজ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রামের উলিপুর সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকেরা কালোব্যাজ ধারণ করে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, ব্যানবেইসের শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাও কর্মবিরতি পালন করেছেন।
এর আগে গত সোমবার ঢাকা কলেজের শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাফসা বেগম বলেন, ঢাকা কলেজে গত সোমবারের ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা মর্মাহত। তাই দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করছি।
গত সোমবার ঢাকা কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো বিলুপ্তির আশঙ্কায় কলেজটির উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা গত সোমবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের দিকে অভিযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। আবার স্নাতক-স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ শিক্ষা ভবনের সামনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ নিয়ে শিক্ষকেরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। একপর্যায়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করছেন। আর শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, শিক্ষকেরা তাদের দুই সহপাঠীকে পিটিয়ে আহত করেছেন।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান: গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫’ বাতিলের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এসে অবস্থান নেন। সেখানে তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন’ বাস্তবায়ন হলে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়বে। এ ছাড়া সোমবার শহিদ মিনারে অবস্থানরত ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থান নেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন বাতিল করো’, ‘ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য রক্ষা করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। রাস্তার মাঝখানে ব্যানার হাতে বসে পড়ায় মুহূর্তেই ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে শাহবাগ, নীলক্ষেত, ধানমন্ডি, কলাবাগান ও মিরপুর রোডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। গরমের মধ্যে ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। যানজটে আটকা পড়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অনেকে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে ট্রাফিক বিভাগের ডিসির অনুরোধে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দেয়।
ধানমন্ডি ট্রাফিক বিভাগের এসি ফারজানা হক বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ডিসি স্যারের কথা হয়েছে। তারা আমাদের অনুরোধে সড়ক ছেড়ে দিয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন