মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


কাওসার মাহমুদ

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০২:১৬ এএম

সাবধানে যান, সামনেই মাছেরা রাস্তা পার হচ্ছে

কাওসার মাহমুদ

প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০২:১৬ এএম

সাবধানে যান, সামনেই  মাছেরা রাস্তা পার হচ্ছে

গত বছর শুরুর দিকে সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলোতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে রীতিমতো ঝড়ের মতো। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (টুইটার), এমনকি হোয়াটসঅ্যাপেও বারবার ঘুরে ফিরে আসে সেই একই দৃশ্য। কিন্তু সেটা কোনো নাচ বা চ্যালেঞ্জ নয়, নয় কোনো বিখ্যাত তারকার বক্তব্য। বরং ভিডিওতে যা দেখা যায়, তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

রাস্তা পার হচ্ছে মাছেরা, আর তাদের রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে একটি সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড: ‘সাবধানে যান, সামনেই মাছেরা রাস্তা পার হচ্ছে!’ প্রথম দেখায় ভিডিওটি যেন কোনো ফিল্মের স্পেশাল এফেক্ট, কিংবা নিছকই ভিজ্যুয়াল মিথ্যে। কিন্তু চোখের সামনে যখন দেখা যায়, সত্যিই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে, একটা নদীর টান যেন গাড়ির রাস্তাকে অতিক্রম করছে, তখন বিস্ময়ের সঙ্গে মিশে যায় প্রশান্তি। আচমকা এই প্রশ্ন জাগে, মানুষের তৈরি রাস্তা কি তবে প্রকৃতির স্রোতের ওপর দিয়ে চলে গেছে? নাকি প্রকৃতি ইচ্ছে করেই তার গতিপথে রেখেছে এই গাড়ির হাইওয়ে? ভিডিওটির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া বার্তায় লেখা ছিল, এটি আমেরিকার কোনো অঞ্চলের দৃশ্য। যদিও স্থানটির সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা হয়নি, ধারণা করা হচ্ছে এটি ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের কোনো এলাকা, যেখানে মাছের স্বাভাবিক চলাচলের সময় জলস্তর বাড়ে এবং মাছেরা নদী থেকে খাল কিংবা ডোবার দিকে চলে যায় ডিম পাড়ার জন্য। স্থানীয় প্রশাসনও এই ঘটনার গুরুত্ব বুঝে মাছের নিরাপদ চলাচলের জন্য রাস্তার ধারে বোর্ড বসিয়ে দেয়, যেন মানুষ বুঝতে পারে, এখন এই পথ প্রকৃতির জন্যও ব্যবহারযোগ্য।

ভিডিওটি যতই দেখতে থাকেন, ততই একটা শান্ত অনুভূতি জেগে ওঠে। আমরা যাদের অগ্রাহ্য করি, সেই মাছেরা, তারা নিজেদের ছন্দে, গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়, ঠিক আমাদেরই মতো। প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের এমন নিঃশব্দ উদাহরণ যেন মনটাকে মুহূর্তে কোমল করে দেয়। এই দৃশ্য অনেককেই ভাবতে বাধ্য করেছে, আমরা কি প্রকৃতির সঙ্গে সত্যিই সহাবস্থান করছি, না কেবল নিজের স্বার্থে সবকিছু দখল করে নিচ্ছি? একটি ভিডিও যখন এমন প্রশ্ন তোলে এবং তার সঙ্গে উপহার দেয় মন ভালো করার মুহূর্ত, তখন সেটি আর নিছক ভাইরাল নয়, তা হয়ে ওঠে এক অনুভবযোগ্য বার্তা। ভিডিওতে দেখা গেছে, জলভর্তি রাস্তায় গাড়িগুলো ধীরে ধীরে চলছে। কোথাও গাড়ি থেমে আছে, চালকেরা জানালা খুলে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন। ছোট-বড় নানা আকারের মাছ জলসহ রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে। যেন প্রকৃতির ছোট ছোট অতিথিরা গাড়ির রাজপথেও নিজেদের চলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে। কোনো তাড়াহুড়া নেই, কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। গাড়ি থেমে যায়, কিন্তু মাছের যাত্রা থেমে না। এই ছোট ভিডিও যেন অজান্তেই বলে দেয়, ‘যদি মন ভালো রাখতে চাও, প্রকৃতির ছন্দ শুনতে শেখো।’ এমনকি অনেক দর্শক এই ভিডিও দেখে মন্তব্য করেছেন ‘এই ভিডিও মন ভালো করে দিল।’ কেউ লিখেছেন, ‘মানুষের উচিত শুধু নিজের গতিতেই না, মাঝে মাঝে অন্যদের পথেও ধৈর্য ধরতে শেখা।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেখানে প্রতিদিন বিতর্ক আর নেতিবাচক খবর আমাদের ভরিয়ে তোলে, সেখানে এই ছোট্ট ভিডিও যেন এক ফোটা নির্মল বৃষ্টি। এক অপ্রত্যাশিত কোণে থেকে সে আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবী এখনো সুন্দর, পৃথিবী এখনো মানবিক হতে পারে, যদি আমরা একটু থেমে অন্যদের চলার পথটা খেয়াল করি। এই ভিডিও হয়তো আর একদিন ভাইরাল থাকবে না, মানুষ হয়তো ভুলে যাবে কোথা থেকে এল এই দৃশ্য। কিন্তু যারা একবার দেখেছেন, তাদের মনে থেকে যাবে, রাস্তায় একদল মাছ হেঁটে চলেছে নিজের গন্তব্যে, আর মানুষ তাদের জন্য গতি কমিয়ে ধৈর্য ধরেছে। সেটাই তো সভ্যতার চূড়ান্ত পরীক্ষা। 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!