বিবাহিত অথচ এক বিছানায় ঘুমান না স্বামী-স্ত্রী। অদ্ভুত শুনালেও ব্যাপারটি জাপানিদের কাছে খুবই স্বাভাবিক। হ্যাঁ, বিশ্বের অন্যতম সুশৃঙ্খল জাতি জাপানিদের কথাই বলছি। জাপানে নানান ধরনের বিয়ের প্রচলন আছে। ফ্রেন্ডশিপ বিয়ে বা সেপারেশন বিয়ে। যা এরই মধ্যে বিশ্বে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
তবে আলাদা ঘুমানোর ব্যাপারে অনেকেই হয়তো এতদিন জানতেন না। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে, জাপানের প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ দম্পতি আলাদাভাবে ঘুমান। এ ছাড়া ২৮ শতাংশ দম্পতি ঘুমান আলাদা ঘরে। শত শত বছর ধরে জাপানে এমন নিয়ম চলে আসছে।
হিয়ান যুগে (৭৯৪-১১৯২) তাতামি উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং তারপর থেকে মেইজি বিপ্লব যখন বিছানা চালু করা হয়েছিল ততক্ষণ পর্যন্ত ফুটনে ঘুমানো সাধারণ হয়ে ওঠে। তারপর থেকে জাপানে ফুটন ব্যবহার হয় ঘুমানোর জন্য। এই ফুটন হচ্ছে এক ধরনের বিছানা। যা মাটিতে বিছানো থাকে।
মূলত জাপানিরা বিশ্বাস করে পর্যাপ্ত ঘুম সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। তাই সাউন্ড স্লিপ একজন মানুষের জন্য অবশ্যই দরকার। যা তাকে পরবর্তী দিন কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করবে। তাদের আলাদা ঘুমনোর মূল কারণ হলো, ব্যস্ত জীবনে সবার সময়সূচি আলাদা। দেরিতে বাড়ি আসা বা সকাল সকাল কাজে যাওয়া স্বামী-স্ত্রীর আলাদা আলাদা সময়ে হয়। সঙ্গীর বিশ্রাম যাতে ব্যাহত না হয়, সে কারণেই তারা আলাদা ঘুমান। স্বামী-স্ত্রী আলাদা ঘুমালে আরও একটা সুবিধা হলো, একজনের হাত পা আর একজনের গায়ের ওপর পড়ে ঘুম বিঘিœত হয় না। যদিও অনেকে মনে করেন আলাদা ঘুমানো মানে দাম্পত্যে ভাটা, সেটা জাপানিরা মনে করেন না। ঘুম তাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। জাপানিদের ঘুমানোর জন্য শুধু একক আকারের ফিউটন ব্যবহার করা হতো। এর সমস্যা হলো, সঙ্গীকে আলিঙ্গন করলে প্রায়শই মেঝেই পড়ে যাওয়ার জোগাড়!
অনেক পরিবার এখনো এই বিছানার শৈলী পছন্দ করেন, কারণ এই ধরনের শয্যা জায়গা কম নেয়। ছোট ঘর এবং অ্যাপার্টমেন্টগুলো অনেক জাপানি দম্পতিকেই একসঙ্গে শুতে বাধ্য করে। তবে জাপানে এটি প্রথা বা শত শত বছর ধরে চলে আসা সংস্কৃতি হলেও এটি কিন্তু ইউরোপেও বিদ্যমান ছিল। ইউরোপে, ১৯ শতকের শেষ পর্যন্ত দম্পতিরা আলাদাভাবে ঘুমাতেন এবং ২০ শতকে একই বিছানায় ঘুমানো একটি আদর্শ শৈলীতে পরিণত হয়েছে।
এ ছাড়া জাপানে সম্প্রতি ‘সেপারেশন ম্যারেজ’ নামের একটি অদ্ভুত বিয়ের ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। যেখানে তরুণ-তরুণীরা একসঙ্গে না থাকার শর্তে বিয়ে করছেন। এই ধরনের বিয়ের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী আলাদাভাবেই বসবাস করেন এবং নিজেদের জীবনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি দেন। বিয়ের পর, তারা সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতেই একসঙ্গে সময় কাটান, অন্য সময় নিজেদের স্বাধীনতা উপভোগ করেন। বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের বিয়েকে প্রেমের সম্পর্কের মতোই দেখছেন। যদিও আইনগতভাবে বিয়ে হয়, কিন্তু এ ধরনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুজনের জীবনযাপন আগের মতোই থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এমন বিয়েতে বিচ্ছেদের ঘটনা অনেক কমে যাবে।