ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫

গণতন্ত্র ও সুশাসন : বাংলাদেশের অগ্নিপরীক্ষা

জুয়েল হাসান
প্রকাশিত: জুলাই ২৮, ২০২৫, ০২:০৩ এএম

এটা যেন বাঙালির অগ্নির মধ্য দিয়ে অগ্রযাত্রা! কখনো কখনো জাতির জীবন এমন এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়ায়, যেখানে প্রতিটি পা ফেলতে হয় আগুনের ওপর দিয়ে। স্বাধীনতা অর্জনের তিন দশক পর গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণে বাংলাদেশের ২০০৮ সাল ছিল তেমনই এক যুগান্তকারী বাঁক, যেখানে একদিকে ছিল দীর্ঘ স্বৈরাচার ও অস্থিরতার ক্লান্তি, আরেকদিকে সুশাসনের এক কল্পিত দিগন্তের সন্ধান।

২০০৮-২০২৫, এই ১৭ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রাপথ ছিল বহুমাত্রিক : একদিকে উচ্চাভিলাষী উন্নয়নের আয়োজন, পদ্মা সেতু থেকে মেট্রোরেল পর্যন্ত গৌরবময় নির্মাণযজ্ঞ, অন্যদিকে গণতন্ত্রের মানচিত্রে অসংখ্য কালো দাগ, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, বিরোধী কণ্ঠরোধ, সাংবিধানিক কাঠামোয় পরিবর্তন, আর মৌলিক অধিকার হরণের এক মর্মন্তুদ কাহিনি।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি, এক-এগারো নামে পরিচিত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উত্থান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারার এক বেদনার সূচনাবিন্দু। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এই সরকার প্রথমে জনপ্রিয়তা পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ পায় এক অঘোষিত কর্তৃত্ববাদী চরিত্র। দুই প্রধান নেত্রীসহ অসংখ্য রাজনীতিবিদ গ্রেপ্তার হন, গণমাধ্যমে সেন্সরশিপ বাড়ে, রাজনীতি নিষিদ্ধ হয় প্রায় দুই বছর। এটি ছিল সেই অধ্যায়, যেখানে জাতীয় রাজনীতির ‘রিকনফিগারেশন’- এর নাম করে আসলে জনগণের রাজনৈতিক অধিকারকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল।

এ সময় একটি নিরপেক্ষ, যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি করার ব্যর্থ প্রয়াস দেশে গণতন্ত্রের ভিত কাঁপিয়ে দেয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় বহু প্রতীক্ষিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জনগণের বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং রূপকল্প ২০২১-এর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। এই রূপকল্পের আওতায় শুরু হয় ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ, ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার চালু, শিক্ষা ও কৃষি ব্যবস্থায় আইসিটির প্রয়োগ। সরকারের নেতৃত্বে তখন ছিল আত্মবিশ্বাস, গতি ও দৃশ্যমান অগ্রগতি। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটে। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের স্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। তবে সেই আলোর ভেতরেই জমতে থাকে অন্ধকার। সংসদে কার্যকর বিরোধী দল না থাকায় জবাবদিহিতার সংকট বাড়তে থাকে। গণতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে থাকে।

২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। সরকারের যুক্তি ছিল, সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই সিদ্ধান্তে জনগণের ভোটাধিকার ও নির্বাচনী আস্থার মেরুদ- ভেঙে পড়ে। এই পরিবর্তনের ফলে পরবর্তী নির্বাচনগুলো সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হয়, যা রোধী দলগুলোর কাছে চরম আপত্তির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের মৌলিক শর্ত হলো সমান সুযোগ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ, যা এই বিলুপ্তির মাধ্যমে খর্ব হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত অধ্যায়গুলোর একটি। বিএনপি ও প্রায় সব বিরোধীদল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। ফলে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হয়। 

যুক্তরাষ্ট্র, ইইউসহ নানা সংস্থা একে গণতান্ত্রিক অনুশীলনের জন্য ‘হতাশাজনক’ বলে আখ্যায়িত করে। সরকার হয়তো সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় থাকে, কিন্তু এর ফলে জনআস্থার বড় একটি ধস নামে। সংসদ কার্যত একদলীয় হয়ে পড়ে, যা গণতন্ত্রের জন্য বিপদসংকেত।

২০১৫ সালে বিরোধী দলের লাগাতার অবরোধ, সহিংসতা ও বোমা হামলা দেশের স্থিতিশীলতা বিপর্যস্ত করে। সেই সময়ে প্রায় ১৫০ জন নিহত হন। সরকার এটিকে দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। এরই মাঝে নেওয়া হয় বেশকিছু সাহসী উন্নয়ন প্রকল্প- নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেল। তবে একই সঙ্গে বাড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই সময় গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, এবং রাজনৈতিক দমননীতি ব্যাপকতা লাভ করে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ৯০% এর বেশি আসন লাভ করে। নির্বাচন ঘিরে ওঠে ভয়াবহ অভিযোগ, ভোট কেন্দ্রে দখল, আগে ভোট, দিনের ভোট রাতে, বিরোধীদের প্রতিহত করা, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব। আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়ান মুক্ত নির্বাচনী নেটওয়ার্ক এবং টিআইবি এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করে। একই বছর পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ)। এই আইনের মাধ্যমেও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যের দায়ে সাংবাদিক, লেখক ও নাগরিকদের গ্রেপ্তারের হার বেড়ে যায়। ২০১৮-২০২২ সময়ে এই আইনে ৯০০-এর বেশি মামলা হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে। কোভিড-১৯ মহামারিতে সরকার নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়, বৃহৎ ভ্যাকসিন কর্মসূচি, আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ইত্যাদি। তবে সেই সময়ই সামনে আসে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির মহাযজ্ঞ, অস্বচ্ছতা, এবং সরকারি মালামালের অপব্যবহারের অভিযোগ। একই সময় র‌্যাব ও অন্যান্য 
বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ বাড়ে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এই সিদ্ধান্ত ছিল বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে বড় এক ধাক্কা।

এই সময় ছিল গণতন্ত্রের জন্য এক শ্বাসরুদ্ধ অধ্যায়। সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে সরকারি অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহের সময় গ্রেপ্তার, আন্দোলনরত ছাত্র-শ্রমিকদের ওপর দমননীতি, বিরোধী দলের র‌্যালিতে পুলিশি বাধা, সব মিলিয়ে মতপ্রকাশের পরিসর ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও বিরোধী দলগুলো অংশ নেয় না। অনেকগুলো আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না। এর ফলে আবারও একতরফা সংসদ গঠিত হয়, এবং নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা আরও ক্ষীণ হয়ে পড়ে।

১৭ বছরের এই যাত্রায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেকদূর এগিয়েছে, জিডিপি বৃদ্ধি, দারিদ্য হ্রাস, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন। কিন্তু একই সঙ্গে দুর্বল হয়েছে : নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, এই প্রশ্ন এখন বারবার ফিরে আসছে, উন্নয়ন কি গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে? কিংবা উন্নয়ন ছাড়া গণতন্ত্র টিকবে না, এই যুক্তি কি একটি রাজনৈতিক অজুহাত? বিশ্ব ইতিহাস বলে, কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা যায় না, যদি না সেখানে থাকে শক্তিশালী, কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা।

২০০৮-২০২৫, এই দীর্ঘ সময়কালের অভিজ্ঞতা আমাদের একটি স্পষ্ট শিক্ষা দেয়: উন্নয়ন একটি অংশ, কিন্তু রাষ্ট্রচর্চা পূর্ণতা পায় তখনই, যখন তার ভিত থাকে গণতন্ত্র, মানবিকতা, এবং জবাবদিহির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি, উন্নয়ন অব্যাহত থাকলেও দেশে বিরাজ করছে রাজনৈতিক মেরুকরণ, বিশ্বাসহীনতা, গণমাধ্যমের সংকোচন, এবং জনগণের রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা। নির্বাচন যদি আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, বিরোধী দল যদি নিঃশেষ হয়, বিচার যদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়, তাহলে কেবল জিডিপি বাড়লেই কি দেশ এগোয়? এই প্রশ্ন আমাদের আজ জরুরি এক আত্মসমালোচনার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন আর মানুষের অধিকার, এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনাই হতে হবে আগামী বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্র কেবলমাত্র সড়ক, সেতু ও স্কাইলাইনের নাম নয়। রাষ্ট্র মানে বিশ্বাস, অধিকার, সম্মান ও স্বপ্নের নিরাপত্তা। যদি সেই স্বপ্ন অনিরাপদ হয়, তাহলে স্থাপনাগুলো একসময় শুধুই ধ্বংসাবশেষ হয়ে থাকবে। 

বাংলাদেশের সামনে এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন : আমরা কি একটি উন্নত অথচ কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের পথে হাঁটব? নাকি একটি গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রচর্চাকে অগ্রাধিকার দেব? গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বা সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য কিছু মৌলিক কাঠামোগত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রাণ। নির্বাচন কমিশনের গঠনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, গ্রহণযোগ্য, সার্চ কমিটি নয় বরং আইনসভার দ্বিদলীয় আলোচনার মাধ্যমে কমিশন গঠন নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইন ভোটিং নয়, বরং ভোটার আইডি যাচাই, সেনা মোতায়েন, এবং স্বচ্ছ ব্যালটিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।

সংবিধানে পুনর্বিবেচনা ও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনরায় ভাবনা : ২০১১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত এখনো রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল উৎস। সংবিধানের মধ্যেই একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সংযোজনের বিষয়টি গণভোট বা রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে নির্ধারণ করা উচিত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা পূর্ণ সংস্কার- ডিএসএ আইন কার্যত একটি রুদ্ধচিন্তা ও ভীতিপ্রদ সরকারিকরণ তৈরি করেছে। এই আইন বাতিল করে একটি তথ্য অধিকার ও গণমাধ্যমবান্ধব আইনি কাঠামো গঠন করতে হবে, যা হয়রানি নয় বরং তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। 

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দুর্নীতিবিরোধী কাঠামো জোরদার : বিচারব্যবস্থাকে দলীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে হবে। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তি প্রণয়ন জরুরি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে সাংবিধানিক শক্তি দিতে হবে। বিরোধী রাজনীতির প্রতি সহনশীলতা ও ন্যায্য পরিসর নিশ্চিত- বিরোধী দল মানেই রাষ্ট্রবিরোধী নয়, এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সংসদে ও রাজপথে বিরোধী মতের উপস্থিতিকে গণতন্ত্রের শক্তি হিসেবে দেখতে হবে। মামলা-গ্রেপ্তার নয়, যুক্তিতর্ক ও নীতিগত আলোচনার পথে ফিরতে হবে।  নাগরিক সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ-সামাজিক মাধ্যমের বাইরে বাস্তব জগতে তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক মেরুকরণ নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক ও মানবিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। স্কুল-কলেজে সিটিজেনশিপ এডুকেশন চালু, গণতান্ত্রিক অধিকার ও দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে। 

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশ : গণতন্ত্রের ফুসফুস-গণমাধ্যম শুধু সংবাদ প্রচারের মাধ্যম নয়, এটি হলো গণতন্ত্রের ফুসফুস। যখন ফুসফুস সংকুচিত হয়, তখন গোটা রাষ্ট্রের শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, শফিকুল ইসলাম কাজল, ফটো সাংবাদিক রায়হান কবির, এই নামগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সত্য বলার দায় কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে মিডিয়া হাউস ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, আইনি সুরক্ষা ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কারণ সুশাসনের ভিত্তি হলো-বিচার ও সত্যের নির্ভয়ে প্রবাহ।

উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবার প্রবণতা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। অথচ এই দুইটি একে অপরের পরিপূরক। যেখানে গণতন্ত্র থাকে, সেখানে উন্নয়ন হয় মানুষের প্রয়োজনের ভিত্তিতে। যেখানে উন্নয়ন হয় গণতন্ত্রহীনভাবে, সেখানে তা হয়ে ওঠে ক্ষমতার প্রতীক, জনগণের নয়। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, বা চিলির অভিজ্ঞতা বলে, টেকসই উন্নয়ন আসে তখনই, যখন সেখানে থাকে সুশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি, স্বাধীন আদালত, স্বচ্ছ নির্বাচন ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা।

নাগরিকের ভূমিকাই চূড়ান্ত : আমরা সবাই, নাগরিক হিসেবে, এই রাষ্ট্রের মালিক। শাসক নয়, আমরাই নির্ধারণ করি রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। এমন এক সময় আমরা দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে নীরবতা মানেই সমর্থন, আর সচেতনতা মানেই প্রতিরোধ। সচেতন নাগরিক মানে : ভুল দেখে প্রশ্ন করা, ভোটাধিকার চর্চা করা, নিরপেক্ষ সংবাদ পড়া ও ছড়ানো,মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে যুক্তিপূর্ণ অবস্থান নেওয়া।

বাংলাদেশ ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, এবং ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের দেশ। এই জাতি কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি। তাই আজকের প্রশ্নও আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে- আমরা কী রাষ্ট্রকে কেবল উন্নয়নের ইমারতে রূপান্তর  করব? নাকি একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক ও সম্মানজনক ভবিষ্যতের ভিত রচনা করব? সময়ের দায় একটাই, রাষ্ট্রকে শুধু উন্নয়নের রূপ নয়, মানুষ ও অধিকারনির্ভর একটি সভ্যতার ভিত দিতে হবে। এই পথ কঠিন, কিন্তু একমাত্র এই পথেই বাংলাদেশ তার স্বপ্নের মুখোমুখি হতে পারে।