ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন 

সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৯:১০ এএম

ঢাকা শহরে মশার উপদ্রব নতুন কিছু নয়, তবে সম্প্রতি তা যেন লাগামছাড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনের আলোতেই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে নগরবাসী। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন চলছে মেয়রবিহীন। বর্তমানে প্রশাসকের মাধ্যমে কার্যক্রম চললেও নগর ব্যবস্থাপনায় দেখা দিয়েছে গতি ও সমন্বয়ের অভাব।

প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও নগরবাসী মশার যন্ত্রণা থেকে নিস্তার পায়নি। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নগরবাসীকে সহ্য করতে হচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রণা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে মানুষ।

রূপালী বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, মশক নিধন কার্যক্রমে ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ৪০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করেছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। মশার কাছে পরাজিত দুই সিটি করপোরেশন।

এরপরও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে যথাযথ পদক্ষেপ। কিন্তু ফলাফল শূন্য। নগরবাসীদের মূল্যায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন করপোরেশনের পূর্বের মেয়র এবং বর্তমান প্রশাসকেরা। যথাপোযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ায় মশক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই দুই সিটি করপোরেশন সফল হবে না বলেও অভিমত সাধারণ নগরবাসীর। মশার কাছে পরাজিত হয়েছে সিটি করপোরেশন। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিগত পাঁচ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, মশক নিধন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে দুই সিটি করপোরেশনের ৪৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। ডিএনসিসিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে মশক ওষুধে ৩০ কোটি, আগাছা পরিষ্কার ও পরিচর্যায় ১ কোটি ৫০ লাখ, ফগার/হুইল/স্প্রে মেশিন পরিবহনে ৩ কোটি, মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিশেষ কর্মসূচিতে ২ কোটি, আউটসোর্সিং কার্যক্রমের জন্য ১২ কোটি এবং চিরুনি অভিযান পরিচালনায় ২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

এভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৩ কোটি ৩৫ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২ কোটি ৫০ লাখ, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮৭ কোটি ৫০ লাখ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ডিএনসিসি। সব মিলিয়ে ৫ বছরে মশক নিধনে ডিএনসিসি মোট ব্যয় করেছে ৩০৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।

অন্যদিকে ২০২০-২০২৪ এই চার অর্থবছরে ডিএসসিসি মশক নিধনে ব্যয় করেছে অন্তত ১২৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২০ কোটি ২ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ২ লাখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩১ কোটি ১ লাখ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয় করেছে ডিএসসিসি।

মশা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি কেবল ধোঁয়া ছড়ানোতে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। লার্ভা ধ্বংস, নিয়মিত নালা পরিষ্কার, জমে থাকা পানির উৎস চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি কাজগুলো নিয়মিত এবং সমন্বিতভাবে করতে হবে। অথচ বাস্তব চিত্র হচ্ছে, অধিকাংশ এলাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয় না, ফগিং মেশিন অনেক সময় অকার্যকর, আবার কোথাও দেখা যায় বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাসেই প্রচারমূলক কিছু কর্মসূচি সীমিতভাবে নেওয়া হয় যা নগরবাসীর জন্য উপহাস মাত্র।

মশা এখন শুধু নগরবাসীর জন্য একটি আতংকের নাম নয়, এটি এক প্রকার জননিরাপত্তার হুমকিতে রূপ নিয়েছে। একদিকে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া রোগী, অন্যদিকে মশার উপদ্রবে রাতের ঘুম হারাম হয়ে উঠছে লাখো মানুষের। তাই নগরবাসীর এই দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসকের নেতৃত্বাধীন সিটি করপোরেশনগুলোর উচিত দ্রুত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা। প্রয়োজনে মশা নিয়ন্ত্রণে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। তবে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে বরাদ্দকৃত বাজেটের যেন অপব্যবহার না হয়। 

আমরা আশা করব স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন এই তিন পক্ষের সমন্বয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। তা না হলে  সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আর সে দায় কোনো পক্ষই এড়াতে পারবে না। মশা দমনে ঢিলেঢালা কোনো পদ্ধতি এখন আর কাজ করবে না। নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।