সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির একাধিক ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরাধের পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়ছে ফলে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিশেষ করে বড় শহরগুলোতে অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা ও নানা ধরনের অপরাধের ঘটনা ঘটছে যা দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে রাষ্ট্রের সুশাসন এবং জনগণের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখে করতে পারে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, রাজনৈতিক সহিংসতা, এবং সংঘবদ্ধ অপরাধের মাত্রা যে হারে বেড়েছে, তা কেবল জননিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থার ওপরও আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।
ব্যক্তিগত শত্রুতা, পারিবারিক বিরোধ, রাজনৈতিক বিভেদ, আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্যের কারণেই খুনোখুনি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। এতে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। ছড়িয়ে পড়ছে শঙ্কা-ভীতি।
সোমবার প্রকাশিত রূপালী বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত খুনের মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩২টি। পুলিশ সদর দপ্তরের গত ১১ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সারা দেশে গড়ে মাসে খুন হচ্ছেন ৩২১ জন। সে হিসাবে গড়ে প্রতিদিন খুন হয়েছেন ১১ জন। পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে গত ১১ মাসে খুনের মামলা হয়েছে ৩ হাজার ৮৩২টি। এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত খুনের মামলা হয় ১ হাজার ৯৩১টি। আর আগের ছয় মাসে এ-সংক্রান্ত মামলা হয় ১ হাজার ৮৯৯টি।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। অপরাধীদের মধ্যে ভয়হীনতা অপরাধের মাত্রায় নৃশংসতা বাড়ায়। নিজেদের ক্ষমতা আর দাপটের জানান দিতে অপরাধীরা বড় ধরনের নৃশংসতা ছড়ায়। এ রকম ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার পেছনে মাদকও একটা বড় কারণ।
দেশের এই ভয়াবহতা ঠেকাতে হলে সামাজিক মূল্যবোধের পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তোলাও প্রয়োজন।
যদিও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে, তবে তাদের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নও রয়েছে। অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে, যা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করছে।
জনগণের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হলে, কঠোর হাতে অপরাধ দমন করতে হবে। আইন প্রয়োগে কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি, অপরাধের মূল কারণগুলো যেমন বেকারত্ব, মাদক সেবন ও পাচার, সামাজিক অবক্ষয় এসব দিকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে নজর দিতে হবে।
জনগণ চায় নিরাপদে চলাফেরা করতে, সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে। এই মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকে কঠোর ও নিরপেক্ষ ভূমিকা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকেরও দায়িত্ব। তবে নেতৃত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষ থেকেই আসতে হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানরে যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তা শক্ত হাতে দমন করতে না পারলে দেশের জনগণ এবং রাষ্ট্র উভয়ই বিপদের মুখে পড়বে। আমরা আশা করব, দেশবাসী এবং সরকার একযোগে কাজ করে আইন-শৃঙ্খলার এই অবনতি রোধে কাজ করবে। যর জন্য শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
আমরা মনি করি, একটি সুশাসিত রাষ্ট্রে জনজীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। সুতরাং, আর কোনো গড়িমসি নয়, এখনই সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন