ঢাকা শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫

ইসলামে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের গুরুত্ব

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২৫, ০৮:২৭ এএম

কৃতজ্ঞতা মহৎ গুণ। কৃতজ্ঞতা মানুষকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। কৃতজ্ঞ মানুষকে সবাই ভালোবাসে। অকৃতজ্ঞকে সবাই অপছন্দ করে, নিন্দা করে। আল্লাহ তায়ালাও কৃতজ্ঞ মানুষকে পছন্দ করেন। অকৃতজ্ঞদের অপছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমার বান্দাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক লোকই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা সাবা, আয়াত : ১৩)।

অকৃতজ্ঞতার কারণেই মানুষ আল্লাহকে অস্বীকার করে। তাঁর দ্বীনকে, তাঁর বিধিবিধানকে প্রত্যাখ্যান করে। নবী-রাসুলদের অবিশ্বাস করে। তাদের আনীত ধর্মকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। এ জন্যই অবিশ্বাসীদের কাফের বলা হয়। কাফের শব্দের এক অর্থ অকৃতজ্ঞ। ইসলামের দৃষ্টিতে কুফরের চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কিছু নেই। আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের দেওয়া নেয়ামতগুলো মানুষের কাছে বলুন।’ (সুরা ইনশিরাহ, আয়াত: ১১)। 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু নাদরা (রহ.) বলেন, ‘সব মুসলিমই মনে করেন, নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা হলো সেই নেয়ামতের কথা বর্ণনা করা, লুকিয়ে না রাখা।’ হজরত নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন, ‘একদিন নবী (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি অল্প জিনিসের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে বেশি জিনিসের কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না। যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতাও আদায় করে না। আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করাই কৃতজ্ঞতা এবং তা বর্ণনা না করাই অকৃতজ্ঞতা।’ (জাওয়ায়েদুল মুসনাদ)।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আল্লাহর নির্দেশনা

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। অকৃতজ্ঞ হতে নিষেধ করেছেন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হিসেবে সব সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আমাদেরও একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো শুধু নিজ কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, (তার স্মরণ রাখা উচিত) আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।’ (সুরা লোকমান, আয়াত: ১২)।

আল্লাহ তায়ালার এই নির্দেশের ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিপূর্ণ আমল করেছেন এবং তাঁর উম্মতকেও নির্দেশ দিয়েছেন তারাও যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮১১)।

কৃতজ্ঞতা প্রকাশে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা

আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর নবী (সা.) রাতে এত বেশি সালাত আদায় করতেন যে তার পদযুগল ফেটে যেত। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন এত ইবাদত করছেন?’ তিনি বলেন, ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না?’ (বুখারি, হাদিস: ৪৮৩৭)।

আল্লাহ তায়ালার সমীপে দোয়া করা এবং তাঁর প্রশংসায় রত থাকা শুধু সমষ্টিগতভাবে আমাদের প্রতি যে রহমত ও করুণা বর্ষিত হয় তার জন্য নয়; বরং তিনি প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবনে এবং পারিবারিক জীবনেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের কারণে প্রত্যেক মুমিনের প্রতিও স্বীয় করুণা ও রহমত বর্ষণ করেন এবং তাকে স্বীয় অনুগ্রহের উত্তরাধিকারী করেন। আমাদের উচিত, নিজের মঙ্গল ও উন্নতির জন্য এবং নিজ পরিবারের কল্যাণ ও পরবর্তী প্রজন্মের মঙ্গল ও কল্যাণার্থে এই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের ধারা অব্যাহত রাখা।