সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেঁজুতি মুমু

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:৩০ এএম

ব্রেইন ড্রেন: দেশের উন্নয়নে অদৃশ্য শত্রু

সেঁজুতি মুমু

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২৫, ১০:৩০ এএম

সেঁজুতি মুমু

সেঁজুতি মুমু

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বড় প্রশ্ন মেধাবীরা কেন দেশ ছেড়ে চলে যায়। কেন প্রত্যেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্নাতক স্নাতকোত্তর পাস করেই দেশের বাইরে সেটেল হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এর কারণ ছড়িয়ে আছে আমাদেরই দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে। একটু বিশ্লেষণ করলেই খুঁজে পাওয়া যাবে কারণগুলো। এর মধ্যে রয়েছে:

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিশ্বমানের গবেষণা, আধুনিক ল্যাব সুবিধা ও প্র্যাকটিক্যাল ভিত্তিক শিক্ষা এখনো সীমিত। এখন যেখানে বিজ্ঞানের যুগ। অথচ বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকমতো ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা দূরে থাক, বিজ্ঞান বিভাগে যেই শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন, তাদের অনেকেই বিজ্ঞানের প্রায়োগিক ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞ। যার ফলে দেখা যায়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সঠিক নয়, অনেক জায়গায় রাজনৈতিক প্রভাবশালী পরিবেশে শিক্ষা বিঘিœত হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতি এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে, যার কারণে শিক্ষা পরিবেশ চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে, যা আমরা এরই মধ্যে প্রত্যক্ষ করে চলেছি। 

শিক্ষাজীবন শেষ করেও যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাওয়া কঠিন।

চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি কিন্তু সে অনুযায়ী চাকরির সুযোগ নেই। পরিসংখ্যানলব্ধ তথ্যমতে, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৬০ শতাংশ মানুষ সরকারি চাকরি করেন। এটি একটি খুবই ছোট শতাংশ, যেখানে দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের কম মানুষ সরকারি চাকরি করার সুযোগ পান। মেধাবীরা প্রাপ্য মূল্যায়ন পান না, ফলে তারা বিদেশে ভালো সুযোগের সন্ধান করেন।

দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ শিক্ষার্থীদের কাছে স্থিতিশীল মনে হয় না। বারবার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা পরিবেশ বিঘিœত হওয়া যেন বাংলাদেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ও শিক্ষক রাজনীতির ভয়াবহ রূপ প্রত্যক্ষ করে, এ রাজনীতির কারণে বৈষম্যের শিকার হয়ে এমনকি অনেক শিক্ষার্থী এ রাজনীতির কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের আশায় মেধাবীরা দেশ ছাড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট, আন্দোলন, দলীয় রাজনীতি শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত করছে। এমনি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কম। তার ওপর যখন এসব কারণে শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হয়, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতৃষ্ণা চলে আসে, তাই তারা দেশ ছাড়াই উপযুক্ত মনে করেন। 

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত না। বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরি ও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ অনেক বেশি। বাংলাদেশের আইনের প্রয়োগেও দুর্নীতি তাই অনেক শিক্ষার্থী মনে করে বিদেশে গেলে ভালো জীবনমান, নিরাপদ পরিবেশ ও উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পাবে। দেশের সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা নিম্নমানের। পরীক্ষণ যন্ত্রগুলো বেশির ভাগই নষ্ট, হাসপাতালে দালালে ভরা। তাই সব দিক বিবেচনায় শিক্ষার্থীরা বিদেশেই নিরাপত্তা খোঁজে। 

উন্নত গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন, গাইডলাইন ও অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই।

ঝঞঊগ (ঝপরবহপব, ঞবপযহড়ষড়মু, ঊহমরহববৎরহম, গধঃযবসধঃরপং) ক্ষেত্রে উন্নত দেশে সুযোগ বেশি। এটাও দেশ ছাড়ার অন্যতম কারণ। 

পরিবার, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে বিদেশে পড়াশোনা বা বসবাস করার সামাজিক মর্যাদা পাওয়া যায়। ‘বিদেশে গেলে জীবন বদলে যাবে’ ধারণাটিও অনেককে টানে। দেশের উন্নয়নে মেধাবীদের দেশমুখী করতে হবে। নয়তো জাতি হিসেবে, দেশ হিসেবে আমরা পিছিয়ে থাকব। এখন এ জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন: বিশ্বমানের কারিকুলাম তৈরি করতে হবে এবং গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা চালু করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ল্যাব, লাইব্রেরি ও ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।  দক্ষ শিক্ষক গড়ে তুলতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়াতে হবে।  চাকরির বাজারকে মেধাভিত্তিক করা দলীয় প্রভাব বা দুর্নীতি বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। 

নতুন নতুন শিল্প, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা কার্যক্রমে বিনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ বা উদ্যোগী হওয়ার মতো অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া। যেন শিক্ষার্থীরা শুধু চাকরির ওপর নির্ভর না করে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা রাখে, সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। গবেষণার ফলাফল সরাসরি শিল্প ও ব্যবসায়ে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। 

বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে যৌথ কাজের সুযোগ বাড়াতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেশনজট ও পরীক্ষার অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ‘বিদেশ মানেই ভালো’ এই ধারণা ভাঙতে হবে। সফল দেশীয় উদ্যোক্তা, গবেষক ও কর্মীদের অনুপ্রেরণামূলক গল্প সামনে আনতে হবে। এ জন্য গণমাধ্যমকে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। গণমাধ্যমে দেশের ইতিবাচক দিক তুলে ধরা। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা বা যৌথ প্রোগ্রাম দেশে চালু করতে হবে। বিদেশে পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রণোদনা দেওয়া ( যেমন রিসার্চ গ্রান্ট, বিশেষ চাকরির সুযোগ)।

গত ১০ বছরে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা জ্যামিতিকভাবে বাড়লেও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার আগ্রহ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এ সময়ে বিদেশে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ বিদেশে উন্নত মানের জীবনযাত্রা, আধুনিক পড়াশোনা এবং শিক্ষার পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো দেশে চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বিদেশি ডিগ্রিকে। ফলে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখী স্রোত বেড়েই চলছে। ইউনেসকোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য গেছে ৫৫টি দেশে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ হাজার ১৫১ এবং ২০২১ সালে ছিল ৪৪ হাজার ৩৩৮। আর ২০১৩ সালে বিদেশে গিয়েছিল ২৪ হাজার ১১২ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে; যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করেন এ-সংক্রান্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০২৩ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেশটিতে শিক্ষার্থী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘রাইজিং স্টার’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবছরই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে উচ্চশিক্ষার যাত্রীর সংখ্যা। তবে এ সংখ্যা প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের তুলনায় এখনো অনেক কম। অন্যদিকে দেশের শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাচ্ছে এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে, এটি আপাতত অর্থে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর দেশে ফেরত না আসা অথবা দেশে তাদের জন্য ভালো কোনো সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারা ভবিষ্যতকে হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই দেশ ও জাতির উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের দেশমুখী করতে সরকার ও জনগণকে সমান ভূমিকা পালন করতে হবে। নয়তো ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়ন সংকটে পড়বে। 

সেঁজুতি মুমু, শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!