সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:৩১ এএম

অন্তর্জালে আটকে প্রবাসীর স্বপ্ন

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:৩১ এএম

অন্তর্জালে আটকে  প্রবাসীর স্বপ্ন

‘মাত্র দুই লাখ টাকায় বৈধ ভিসায় বিদেশে যাওয়া সম্ভব’, ‘সরকারি অনুমোদিত বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনো পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি’ ফেসবুক খুললেই চোখে পড়ে এমন রঙিন বিজ্ঞাপন, ঝকঝকে পোস্টার, সরকারি নানা ধরনের নাম এবং লাখো ফলোয়ারের পেজ। নাম শুনলে মনে হয় সরকারি বা স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিসিয়াল পেজ ‘চৎবঢ়ধৎধঃরড়হ ভড়ৎ ইঈঝ ঢ়ৎবষরসরহধৎু ্ ইধহশ লড়ন’ বা ‘এড়াঃ ঔড়ন ঈরৎপঁষধৎ ইউ’- এর মতো।

পেজের কভার ফটোয় সাজানো থাকে পরীক্ষার প্রস্তুতির টিপস, সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশট, আর মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক উক্তি দিয়ে। দেখতে অনেকটা সোজাসাপ্টা সহজ মনে হতে পারে। তবে এই সাজানো মুখোশের আড়ালেই লুকিয়ে থাকে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ। এ ধরনের পেজগুলো প্রথমে প্রবাস প্রত্যাশী দর্শকের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করে। কিছুদিন ধরে নিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করে, চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রশ্নের উত্তর দেয়, এমনকি বিনা মূল্যে প্রস্তুতির টিপসও দেয়। যখন একটি বিশাল সংখ্যক ফলোয়ার তৈরি হয়, তখনই তারা ছুড়ে দেয় আসল টোপ! নানারকম লোভনীয় অফার। যেখানে বলা হয় ‘মাত্র দুই লাখ টাকায় ইউরোপের মতো প্রতিষ্ঠিত দেশে বৈধ ভিসায় যাওয়া সম্ভব’ কিংবা ‘সরকারি অনুমোদিত বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোনো পরীক্ষা ছাড়াই পাওয়া যায় চাকরি’। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে, তাদের ফেসবুক কিংবা সোশ্যাল এক্টিভিটি দেখে ভুয়া মনে হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম  তাইতো এমন প্রস্তাবে অনেক ঝুঁকে পড়ে অনেক স্বপ্নবাজ তরুণ। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন চাকরি খুঁজেও ব্যর্থ হয়েছেন বা বিদেশে কাজের স্বপ্ন দেখছেন; এমন মানুষের সংখ্যা এখানে তুলনামূলক বেশি। প্রতারণা চক্র বিভিন্ন অফার ঘোষণার পর সাধারণত কমেন্টে একটি আবেদনের লিঙ্ক দেয়। দেখলে মনে হবে এটি কোনো সরকারি বা স্বীকৃত এজেন্সির ওয়েবসাইট। কিন্তু ক্লিক করলেই খোলে একটি নকল সাইট, যেখানে আবেদনকারীর নাম, জন্মতারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য, এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং পিন পর্যন্ত চাওয়া হয়। এই তথ্যে সম্মতি দিয়ে আবেদন পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয় ব্যক্তিগত ও আর্থিক সব গোপন তথ্য। এরপর হয় সরাসরি অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি, নয়তো এসব তথ্য বিক্রি হয়ে যায় ডার্ক ওয়েবে। যেখানে অপরাধীরা তা ব্যবহার করে আরো বড় আর্থিক প্রতারণা বা পরিচয় চুরির কাজে। প্রতারকরা এখন সরকারের নতুন আইন বা নীতি পরিবর্তনের খবরও নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। সরকারি তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করছেন  এমন বার্তা যেন প্রবাসীরা বুঝতে পারেন যে বিষয়টি পুরোপুরি বৈধ ও সরকার অনুমোদিত। অথচ বাস্তবে এমন কোনো নীতি নেই। এই ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে প্রতারকরা তরুণদের মধ্যে তাড়াহুড়ো ও আস্থাহীনতার মনস্তত্ত্ব তৈরি করে, যাতে যাচাই না করেই আবেদন করে ফেলে অনেকেই। সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধু ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমেই দেশে লাখ লাখ তরুণ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে অনলাইনে সক্রিয় বিদেশে চাকরিপ্রত্যাশীরা এ ধরনের প্রতারণার প্রধান লক্ষ্য। তাই এসব প্রতারণা এড়াতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। 

ফিশিং লিঙ্ক 
প্রতারক পেজ চেনার জন্য কয়েকটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। যেমন- অতি লোভনীয় অফার, অফিসিয়াল যাচাইহীনতা, অচেনা লিঙ্ক, ব্যক্তিগত আর্থিক তথ্যের দাবি, এবং আবেদন করতে তাড়াহুড়োর মনস্তত্ত্ব তৈরি করা। এগুলো দেখলেই সতর্ক হতে হবে। কোনো লিঙ্কে প্রবেশের আগে উৎস যাচাই করা, সরকারি ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোনো সাইটে তথ্য না দেওয়া, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে দ্বৈত নিরাপত্তা (ঃড়ি-ভধপঃড়ৎ ধঁঃযবহঃরপধঃরড়হ) চালু রাখা, এবং সন্দেহজনক পেজ বা অফার পেলে প্রমাণ সংগ্রহ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার
বাংলাদেশে বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার অপরাধ দমন সেল সক্রিয়ভাবে অনলাইন প্রতারণা মোকাবিলায় কাজ করছে। যে কেউ ৯৯৯ বা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানাতে পারে। প্রতারণার প্রমাণ (পেজের লিঙ্ক, স্ক্রিনশট, লেনদেনের তথ্য) দিলে অপরাধীদের খুঁজে বের করা তুলনামূলক সহজ হয়। তবে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই ব্যক্তিগত সতর্কতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতারণা ঠেকাতে যা করবেন
অনলাইন প্রতারণা ঠেকানোর মূল উপায় হলো সাধারণ মানুষের বিশেষ সচেতনতা বৃদ্ধি। প্রতারকেরা প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত কৌশল বদলায়, তাই আমাদের তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু শেয়ার বা ক্লিক করার আগে ভাবতে হবে, এটি সত্যিই নিরাপদ কি না। প্রতারণার জাল থেকে মুক্ত থাকতে প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো, নিজের মতো অন্যকেও সচেতন করা। পরিবারে, বন্ধুদের মধ্যে, কিংবা অনলাইনে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তাদের এসব ঝুঁকি সম্পর্কে জানানোই পারে পরবর্তী ভুক্তভোগীকে বাঁচাতে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!