সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আল আমিন, মালয়েশিয়ান প্রবাসী

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:৩৪ এএম

চাপমুক্ত প্রবাস জীবনের পথনির্দেশ

আল আমিন, মালয়েশিয়ান প্রবাসী

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৭:৩৪ এএম

চাপমুক্ত প্রবাস জীবনের পথনির্দেশ

বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকের কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। গ্রামের মেঠোপথ থেকে শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, সবখানে প্রবাসী জীবনের গল্প শোনা যায়। কেউ বাড়ি বানিয়েছে, কেউ পরিবারের ভাগ্য বদলেছে, কেউ আবার ছেলেমেয়ের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এই সাফল্যের আড়ালে রয়েছে এক অদৃশ্য শত্রু, আর্থিক চাপ। বিশেষ করে নতুন প্রবাসীদের জন্য এটি এমন এক কঠিন বাস্তবতা, যা সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অভাবে শুরুতেই স্বপ্নকে ম্লান করে দিতে পারে। বিদেশে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকেই বিপুল ঋণের বোঝা বয়ে বেড়ান।

ভিসা ও টিকিটের খরচ মেটাতে অনেকে জমি বন্ধক রাখেন, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার করেন কিংবা এনজিও ও ব্যক্তিগত ঋণের সহায়তা নেন। এই ঋণ শোধের দায় মাসিক আয়ের বড় অংশ কেটে নেয়, ফলে নিজের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য যাত্রার আগেই ঋণের পরিমাণ যতটা সম্ভব সীমিত রাখা প্রয়োজন, আর যদি ঋণ নিতেই হয়, কিস্তির অঙ্ক যেন এমন হয় যা নিজের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত না করে। নতুন দেশে জীবনযাত্রার খরচের বাস্তবতা অনেক সময় ধারণার বাইরে থাকে। বাংলাদেশে যে টাকায় এক মাস স্বাচ্ছন্দ্যে চলা যায়, বিদেশে তার দ্বিগুণ বা তিগুণও যথেষ্ট নাও হতে পারে। বাসাভাড়া, খাবার, পরিবহন, চিকিৎসা! সব মিলিয়ে মাসের শুরুতেই টাকার বড় অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেকেই প্রথমদিকে বাজারদর ও ব্যয়ের সঠিক হিসাব না জানায় দ্রুত আর্থিক সংকটে পড়েন। এই ঝুঁকি কমাতে স্থানীয় খরচ সম্পর্কে আগে থেকেই খোঁজ নেওয়া জরুরি, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই সেই দেশে আছেন তাদের কাছ থেকে। খরচের অগ্রাধিকার ঠিক করাই এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বেতন হাতে আসার পর প্রথমেই বাসাভাড়া, খাবার, পরিবহন ও ঋণের কিস্তি আলাদা করে রাখা উচিত। তারপর বাকি টাকা ধীরে ধীরে ব্যয় করা এবং অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা বা বিলাসী ব্যয় থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। 

প্রবাস জীবনের প্রথম দিকে অনেকেই নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিলাসী কেনাকাটায় টাকা খরচ করে ফেলেন, যা মাসের শেষ দিকে বড় সমস্যায় ফেলে। মনে রাখা দরকার, যত তাড়াতাড়ি সঞ্চয় শুরু করা যায়, তত দ্রুত আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব। আয় অনিয়মিত হলে জরুরি তহবিল গড়ে তোলার অভ্যাস থাকা উচিত। প্রবাস জীবনে হঠাৎ কাজ হারানো, অসুস্থ হয়ে পড়া বা অন্য কোনো জরুরি পরিস্থিতি আসতেই পারে। কয়েক মাসের খরচ মেটানোর মতো সঞ্চয় থাকলে এমন বিপদে পড়লেও অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না কিংবা নতুন করে ঋণ নিতে হয় না। প্রতি মাসে সামান্য হলেও সঞ্চয়ে রাখলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বড় নিরাপত্তার জাল তৈরি করে। একই সঙ্গে স্থায়ী ও নির্ভরযোগ্য কাজের সন্ধান পাওয়া প্রবাস জীবনের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। শুরুতে কাজের ধরন বা বেতন পছন্দসই না হলেও নিয়মিত আয়ের উৎস থাকা বড় সুরক্ষা।

সুযোগ এলে ধীরে ধীরে ভালো কাজ বা বেশি বেতনের চাকরিতে যাওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে পার্টটাইম বা অতিরিক্ত সময়ের কাজ করে আয় বাড়ানো যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত কাজের চাপে স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ অসুস্থতা মানেই নতুন খরচের বোঝা। পরিবারের সঙ্গেও আর্থিক পরিকল্পনা ভাগ করে নেওয়া জরুরি। দেশে থাকা পরিবার যদি আপনার আয়-ব্যয়ের সীমাবদ্ধতা বোঝে, তবে তারা অতিরিক্ত টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেবে না। খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে অযথা মানসিক চাপ এবং অতিরিক্ত ব্যয় দুটোই এড়ানো সম্ভব। প্রবাস জীবন শুধুমাত্র টাকা উপার্জনের জন্য নয়, বরং একটি স্থিতিশীল ভবিষ্যত গড়ার জন্য। তাই নতুন প্রবাসীদের উচিত শুরু থেকেই পরিকল্পনা করে চলা, ঋণের বোঝা কম রাখা, সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখা। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে বিদেশের জীবন শুধু আয়-ব্যয়ের খাতা নয়, বরং সম্ভাবনার বিস্তৃত এক নতুন অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!