সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৫১ এএম

মালদ্বীপের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৫১ এএম

মালদ্বীপের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সম্ভাবনা

পর্যটননির্ভর দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য বহু বছর ধরে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। ছোট কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল এই দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে বিদেশি শ্রমশক্তি দেশটির উন্নয়ন ও দৈনন্দিন কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার শ্রমিক ইতোমধ্যে মালদ্বীপে কর্মরত আছেন, যাদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে মালদ্বীপ সরকারের কঠোর আইন, কোটা ব্যবস্থা এবং অবৈধ অভিবাসন রোধের পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে। একদিকে নতুন সুযোগের দ্বার খুলছে, অন্যদিকে বাড়ছে আইনি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ। ফলে এই শ্রমবাজারে এখন টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন দক্ষতা, বৈধতা ও সতর্কতার সমন্বয়। এসব বিষয়ের আদ্যোপ্যান্ত জানাচ্ছেন মিনহাজুর রহমান নয়ন

সুযোগ-সম্ভাবনা

মালদ্বীপের অর্থনীতি পুরোপুরি নির্ভরশীল পর্যটন শিল্পের ওপর, যা দেশের মোট আয়ের প্রধান উৎস। প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসে দ্বীপজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোতে। এসব রিসোর্ট পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, খাদ্য পরিবেশন, নির্মাণ ও কারিগরি কাজের জন্য বিপুলসংখ্যক বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন হয়। এই জায়গাতেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি হয়েছে। মালদ্বীপের রিসোর্টগুলোতে হাউসকিপিং, ওয়েটার, কুক, টেকনিশিয়ান, মেরামতকর্মীসহ নানা পদে দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মীর চাহিদা রয়েছে। অনেক বাংলাদেশি ইতোমধ্যেই এই খাতে সফলভাবে কাজ করছেন। বেতন কাঠামো তুলনামূলকভাবে ভালো এবং আবাসন ও খাবারের সুবিধাও বেশ উন্নত। উপরন্তু, বাংলাদেশের জলবায়ু ও সংস্কৃতির সঙ্গে মালদ্বীপের মিল থাকায় এখানকার কাজের পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া তুলনামূলক সহজ। এ ছাড়া নির্মাণ ও অবকাঠামো খাতে পর্যটনের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিমানবন্দর, হোটেল, সেতু, রাস্তা ও বাসস্থান নির্মাণের কাজও চলছে। নির্মাণ খাতে দক্ষ রাজমিস্ত্রি, প্লাম্বার, ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার ও ওয়েল্ডারদের চাহিদা এখনো রয়েছে। যদিও অদক্ষ কর্মীদের নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে, তবুও প্রশিক্ষিত ও সার্টিফায়েড কর্মীদের জন্য এই খাতে সুযোগের অভাব নেই। দেশটিতে সাংস্কৃতিক মিল ও সামাজিক সুবিধাও কম নয়। বাংলাদেশি কর্মীরা মালদ্বীপে তুলনামূলকভাবে কম মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করতে পারেন, কারণ উভয় দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির অনেক মিল রয়েছে। অনেক মালদ্বীপীয় পরিবার বাংলা ভাষার কিছুটা ধারণা রাখে, যা পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করে তোলে। তা ছাড়া, মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় ধর্মীয় অনুশীলনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সুবিধাজনক পরিবেশ বিদ্যমান। সব মিলিয়ে, মালদ্বীপ এখনো বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার, তবে সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে কর্মীদের হতে হবে দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও বৈধভাবে প্রেরিত।

চ্যালেঞ্জ

মালদ্বীপ সরকারের নতুন শ্রমনীতি ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। যার মধ্যে রয়েছে অদক্ষ কর্মী নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা। অতীতে জাল কাগজপত্র, ভিসা বাণিজ্য ও অবৈধ নিয়োগের কারণে মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ কর্মী নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে শুধু কারিগরি ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরাই বৈধভাবে মালদ্বীপে যেতে পারেন। এর ফলে যারা দক্ষতা অর্জন ছাড়াই বিদেশ যেতে চান, তারা এখন এই বাজারে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন না। আবার দেশভিত্তিক কোটা ব্যবস্থায় মালদ্বীপ সরকার প্রত্যেক দেশের জন্য সর্বোচ্চ এক লাখ কর্মীর কোটা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের কোটা ইতোমধ্যেই পূর্ণ হওয়ায় নতুন ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। ফলে নতুন কর্মীদের মালদ্বীপে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কোটা পুনর্বিন্যাস বা নতুন শ্রমচুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগের সুযোগ সীমিতই থাকবে। বাংলাদেশে অনেক দালাল চক্র ফ্রি ভিসা বা ওপেন ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে মালদ্বীপে ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই। যে কোম্পানি ভিসা দেয়, কর্মীকে অবশ্যই সেই কোম্পানির অধীনেই কাজ করতে হয়। অন্য কোথাও কাজ করলে তা অবৈধ হিসেবে গণ্য হয় এবং শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়, গ্রেপ্তার বা দেশে ফেরত পাঠানো পর্যন্ত ঝুঁকি রয়েছে। মালদ্বীপ সরকার সম্প্রতি ‘কুরাঙ্গি’ নামের এক অভিযান শুরু করেছে অবৈধ অভিবাসী শনাক্ত করতে। এতে অভিবাসীদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং যারা বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারছেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি কর্মী এই অভিযানে ধরা পড়েছেন, যাদের কেউ কেউ দেশে ফেরত গেছেন। কিছু অনৈতিক নিয়োগ এজেন্সি বা কোম্পানির জাল কাগজপত্র ব্যবহার এবং পারমিট নবায়নে গড়িমসি করার কারণে অনেক কর্মী অনিচ্ছা সত্ত্বেও অবৈধ অবস্থানে পড়েছেন।

কর্মীদের জন্য পরামর্শ

মালদ্বীপের শ্রমবাজারে সফল হতে হলে এখন কেবল শ্রমের ইচ্ছা নয়, বরং দক্ষতা ও সততার সমন্বয় অপরিহার্য। যেহেতু অদক্ষ কর্মীর চাহিদা নেই, তাই সম্ভাব্য প্রবাসীদের উচিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা। যেমন: ইলেকট্রিশিয়ান, হাউসকিপার, কুক, প্লাম্বার, ওয়েল্ডার বা কম্পিউটার টেকনিশিয়ান হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া হলে মালদ্বীপে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। ফ্রি ভিসা বা শর্টকাট পদ্ধতির প্রতি কোনোভাবেই আগ্রহী হওয়া উচিত নয়। বরং বিএমইটি কার্ড রেজিস্ট্রেশন, সরকারি অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি ও মালদ্বীপের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কোম্পানির মাধ্যমে বৈধ পথে যেতে হবে। এতে প্রতারণা বা দেশে ফেরত আসার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।অনেক সময় কর্মীরা না বুঝে চুক্তিতে সই করেন, পরে নানা সমস্যায় পড়েন। তাই ভিসা ও কর্মচুক্তির শর্তাবলি ভালোভাবে পড়ে নেওয়া, প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নেওয়া উচিত। বেতন, কর্মঘণ্টা, আবাসন ও চিকিৎসা-সুবিধা সম্পর্কে আগেই নিশ্চিত হওয়া জরুরি। এ ছাড়া মালদ্বীপে অবস্থানকালে স্থানীয় আইন, সংস্কৃতি ও কর্মনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। সময়মতো ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করা, কোম্পানির নিয়ম মেনে চলা এবং কোনো অবৈধ কাজে জড়ানো থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি। কেননা মালদ্বীপের শ্রমবাজার এখন এক নতুন রূপ নিচ্ছে, যেখানে কেবল দক্ষ, প্রশিক্ষিত ও বৈধভাবে প্রেরিত কর্মীরাই টিকে থাকতে পারবেন। বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য এই বাজারে সম্ভাবনা এখনো অনেক, তবে সেটি কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন সততা, সচেতনতা এবং দক্ষতার সমন্বিত প্রয়াস।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!