উচ্চ পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য স্পেন এখন আর দূর স্বপ্ন নয়, বরং ইইউ ব্লু-কার্ড (ঞধৎলবঃধ অুঁষ-টঊ)-এর মাধ্যমে এটি একটি সুগম পথ। তবে, বাংলাদেশ থেকে স্পেনে সরাসরি কূটনৈতিক মিশন না থাকায় এই প্রক্রিয়ায় কিছু বাড়তি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এটি একটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন করার মতো কাজ, যার মূল ভিত্তি হলো স্প্যানিশ কোম্পানি থেকে পাওয়া একটি উচ্চ বেতনের চাকরির চুক্তি।
প্রাথমিক ধাপ: স্প্যানিশ চাকরি ও সরকারি অনুমোদন
স্পেন থেকে ব্লু-কার্ড নিয়ে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়ার ভিত্তি তৈরি হয় বাংলাদেশে থাকাকালীন।
চাকরি নিশ্চিতকরণ: আবেদনকারীকে অবশ্যই স্পেনের কোনো কোম্পানি থেকে কমপক্ষে এক বছরের চাকরির চুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই চাকরির বেতন স্পেনের ব্লু-কার্ডের জন্য নির্ধারিত গড় বেতনের ১.৫ গুণের বেশি হতে হবে।
স্প্যানিশ কোম্পানির দায়িত্ব : নিয়োগকর্তা (স্প্যানিশ কোম্পানি) স্পেনের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (ঙভরপরহধ ফব ঊীঃৎধহলবৎল্পধ) এর কাছে আপনার পক্ষ থেকে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করেন। এটি ব্লু-কার্ডের জন্য প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইনি অনুমোদন।
অনুমোদনপত্র : কোম্পানির মাধ্যমে এই সরকারি অনুমোদনপত্রটি (জবংড়ষঁঃরড়হ খবঃঃবৎ) সংগ্রহ করতে হবে, যা ভিসা আবেদনের জন্য মূল দলিল হিসেবে কাজ করে।
নথি প্রস্তুত : আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, পেশাগত সনদ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এবং মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ সকল নথি কনস্যুলেটের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুত, সত্যায়িত এবং প্রয়োজনে স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করে নিতে হবে।
ভিসা আবেদন: কনস্যুলেট প্রক্রিয়া যেহেতু বাংলাদেশে স্পেনের কোনো দূতাবাস বা কনস্যুলেট নেই, তাই বাংলাদেশি নাগরিকরা সাধারণত ভারতে অবস্থিত নয়াদিল্লির স্প্যানিশ দূতাবাস বা মুম্বাইয়ের কনস্যুলেট থেকে ভিসার জন্য আবেদন করেন।
ভিসার প্রকার : আপনাকে দীর্ঘমেয়াদি ন্যাশনাল ভিসা বা ডি-৩ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
অ্যাপয়েন্টমেন্ট : নির্ধারিত কনস্যুলেট বা তাদের নিযুক্ত ঠঋঝ গ্লোবালের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে কিছু সময় লাগতে পারে।
নথি জমা : অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন সকল মূল ও সত্যায়িত নথিপত্র এবং স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কপিসহকারে আবেদন জমা দিতে হবে।
ভিসা সংগ্রহ : ভিসা অনুমোদিত হলে, আপনার পাসপোর্টে স্ট্যাম্পিং হয়ে গেলে আপনি স্পেনে প্রবেশের অনুমতি পাবেন।
চূড়ান্ত ধাপ: স্পেনে প্রবেশ ও কার্ড সংগ্রহ
ভিসা পাওয়ার পর আপনার স্পেনে যাত্রা এবং সেখানে স্থায়ী বসবাসের ভিত্তি তৈরি করার পালা।
স্পেনে প্রবেশ : আপনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্পেনে প্রবেশ করবেন।
রেসিডেন্সি কার্ড : স্পেনে প্রবেশের এক মাসের মধ্যে আপনাকে স্থানীয় পুলিশ স্টেশন বা অভিবাসন অফিসে গিয়ে বিদেশি পরিচয়পত্রের (ঞওঊ) বা ব্লু-কার্ডের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
বায়োমেট্রিক : অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ ও ছবি) নেওয়া হবে।
কার্ড হাতে পাওয়া : সব ঠিক থাকলে, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আপনি আপনার প্রথম ঞধৎলবঃধ অুঁষ-টঊ (ব্লু-কার্ড) হাতে পাবেন, যা স্পেনে আপনার বৈধ বসবাস ও কাজের প্রমাণ।
দ্রষ্টব্য : ব্লু-কার্ড উচ্চ পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য নিরাপদ এবং বৈধ পথ। এই প্রক্রিয়ায় চাকরি এবং বেতনের মানদ- সঠিক থাকলে ভিসা প্রাপ্তির সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি থাকে।
এই প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে ভারতের স্প্যানিশ কনস্যুলেটের সর্বশেষ নির্দেশিকাগুলো এবং নথিপত্রের প্রয়োজনীয়তা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে।
স্পেনে আপনার পছন্দের পেশা বা উচ্চ চাহিদার চাকরির ক্ষেত্রগুলো নিয়ে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন