দেশের সংগীতাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। বিশেষ করে সিনেমার গানে তার অবদান দেশের মানুষ যুগের পর যুগ মনে রাখবে। নব্বই দশকটা ছিল কনকচাঁপার জয়জয়কারের সময়। সেই সময়টাতে এমন কোনো সিনেমা ছিল না বলা চলে যে কনকচাঁপার গান ছিল না। প্রযোজক-পরিচালকদের অলিখিত একটা দাবিই ছিল যে সিনেমায় কনকচাঁপার গান থাকতেই হবে। কারণ, একটা সময় বাংলাদেশের সিনেমার প্লে-ব্যাকে দাপুটে সময় কাটিয়েছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন ও রুনা লায়লা। আর তাদের দুজনের পর একচ্ছত্র দাপুটে সময় কাটিয়েছেন কনকচাঁপা।
দেশে বিদেশে কনকচাঁপার কোটি কোটি ভক্ত। কিন্তু এই গায়িকা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার বাকি জীবন সাধারণ মানুষের সেবায় পার করে দেবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কনকচাঁপা বিএনপি থেকে ‘সিরাজগঞ্জ-১’ আসনের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। এখন রাজনীতি নিয়েই তার সব ব্যস্ততা।
রাজনীতিতে কতদূর যেতে চান? উত্তরে কনকচাঁপা বলেন, ‘রাজনীতিতে কতদূর যেতে পারব জানি না। তবে আমি মানুষের কাছে যেতে চাই। আমি মানুষের এতটাই কাছে যেতে চাই সাধারণ মানুষ আমাকে হাত বাড়ালেই যেন পায়। এটা সত্যি যে একটা সময় গান দিয়ে, গান গেয়ে মানুষের মাঝে ছিলাম; অন্তরে ছিলাম। এখনো হয়তো আছি। তবে আমি চাই আমার দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরের সাধারণ মানুষের কাজে আসতে। মূল কথা হলো- আমি আমার বাকিটা জীবন তাদের জন্যই ব্যয় করতে চাই।’
এদিকে, আজ কনকচাঁপার জন্মদিন। জন্মদিন নিয়ে তার বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। তবে তার মেয়ে এবং পুত্রবধূ দিনটিকে বিশেষায়িত করে তোলার চেষ্টা করে। আবার তার একটি গানের অনলাইন স্কুল আছে। সেই স্কুলের ছেলে মেয়েরা আজ সন্ধ্যায় তার বাসায় আসবে। এ নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
অনেক দিন ধরেই নতুন গানে নেই কনকচাঁপা। কারণ জানালেন, তার সময়ের গানের সেক্টরে যারা কাজ করতেন- সেসব গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, এমন কী কোনো কোনো সহশিল্পী, স্টুডিও ইঞ্জিনিয়ার-সবাই যেন দল বেঁধেই পরপারে চলে গেলেন। আর এই সময় যারা গান করছেন তাদের সঙ্গে কনকচাঁপার খাপ খাওয়ানোটাও সময়ের ব্যাপার। এমন কিছু গান করার প্রস্তাব আসে, যা তার সঙ্গে একেবারেই বেমানান।
তার ভাষ্যমতে, সবকিছু মনের মতো না হলে গান করতে চাই না। ভিউয়ের এই যুগে বহুদিন থেকে যাবার মতো গান যেমন হচ্ছে না, আবার সিগনেচার ভয়েসও হচ্ছে না। কনকচাঁপা বলেন, ‘সত্যি বলতে কী ভালো বা মেলোডিয়াস গানের চেয়ে এখন আইটেম গান বেশি হিট হচ্ছে। হয়তো এটা যুগের চাহিদা। কিন্তু আইটেম গানের সঙ্গে সামান্য কাপড়ে যখন সিনেমার পর্দায় বা চ্যানেলে সেই গানটি আসে তখন তা আসলে দেখতে আর ইচ্ছে করে না। আর সিগনেচার ভয়েসটা তৈরি হতে একটু সময় লাগে। পরে বুঝা যায়। তবে এখন সময়টা বেশি লাগছে। কারণ সব গান প্রায় একই রকম হচ্ছে। আমাদের মেলোডিয়াস গানের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। এখনো মানুষ একান্তে সুন্দর সময় কাটানোর জন্য শ্রদ্ধেয় ফেরদৌসী রহমান, ফিরোজা বেগম, সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা কিংবা সন্ধ্যা মুখার্জির গান শোনেন। মেলোডিয়াস গানের চাহিদা যুগের পর যুগ থেকে যায়।’
যোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি আজীবন নিজেকে কণ্ঠ শ্রমিকই বলি। নদীর মাঝি, পানের দোকানদার, চায়ের স্টলের মালিক তারাও আমার গান শুনেন। সে সব শ্রমিকদের সম্মান রেখেই বলছি- আমি তাদের সঙ্গে নিজের অ্যাটাচম্যান্ট রাখতেই স্বাভাবিকভাবেই আমি নিজেকে কণ্ঠ শ্রমিক পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।’
কনকচাঁপা ১৯৯৫ সালে ‘লাভ স্টোরি’ সিনেমাতে ‘কেতা মানুষ ভবের বাজারে’ গানটি গাওয়ার জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর তিনি ‘প্রেমের তাজমহল’ সিনেমায় ‘এ বুকে বইছে যুমনা’ ও পরবর্তীতে ‘এক টাকার বউ’ সিনেমার ‘ভালোবাসা ভালোবাসা থাকো তুমি দূরে’ গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।