দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। দুই দশকের বেশি সময় ধরে পশ্চিমবঙ্গে তার উপস্থিতি যেন আলাদা উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছে। ঢাকার সিনেমাতেও আলো ছড়িয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ১০ বছর পর শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত সিনেমা ‘দেবী চৌধুরাণী’। নতুন সিনেমা, পূজার পরিকল্পনা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে কলকাতা থেকে শ্রাবন্তী কথা বলেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে।
পূজার পরিকল্পনা
এবারের পূজায় আমি দ্বিগুণ খুশি। কারণ, পূজা উপলক্ষে আমার ‘দেবী চৌধুরাণী’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যে কারণে আনন্দটা একটু বেশিই। পূজা বাঙালিদের শ্রেষ্ঠ উৎসব। বরাবরের মতো এবারও পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাব। সবাই মিলে ঠাকুর দেখতে যাব। বাড়ির কমপ্লেক্সে পূজা হয়, সেখানে সময় দেব। এভাবেই আনন্দ উল্লাসে আর সিনেমা দেখে কাটবে সময়।
স্মৃতি
পূজা ঘিরে অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। যৌথ পরিবারে বসবাস করার কারণে সবাই একত্রে পূজা উদযাপন করা হতো। এটা এখন খুব মিস করি। তবে পূজা ঘিরে আমার বেশির ভাগ মধুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষা করি। পূজার সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং কাশফুল দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। বিশেষ করে বিকেল বেলায় যখন সূর্যাস্ত হয় তখন সেই দৃশ্য দেখত অসাধারণ লাগে।
উপহার
আগে পূজায় অনেক উপহার পেতাম। এখনো পাই। তবে এখন উপহার দিতে হয় বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি পূজায় উপহার পেতে ভালো লাগে।
দেবী চৌধুরাণী
এটা ঐতিহাসিক একটি সিনেমা। ১৭৭০ সালের বাংলার প্রেক্ষাপটে, গল্পটি ভবানী পাঠকের তত্ত্বাবধানে এক সাধারণ গ্রামের মেয়ের বিপ্লবী নেত্রী দেবী চৌধুরাণীতে রূপান্তরিত হওয়ার কাহিনি অনুসরণ করে। এটা শুধু একটা গল্প নয়, একটা ইতিহাস পর্দায় তুলে আনা হয়েছে। সিনেমাটা সারা বিশ্বের সবার দেখা উচিত। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছর পর এবারের পূজায় আমার সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। যে কারণে সব মিলিয়ে ভালো লাগা একটু বেশিই। ২০১৫ সালের পূজায় মুক্তি পেয়েছিল আমার ‘শুধু তোমারই জন্য’। সেই সিনেমা দর্শকের অনেক ভালোবাসা পেয়েছিল। আশা করি, এবারও সমান ভালোবাসা পাবে।
প্রত্যাশা
পূজা যেহেতু স্পেশাল এ সময় সিনেমা মুক্তি পেলে ছুটিতে সবাই পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখে। সেই জায়গা থেকে প্রত্যাশা করছি, ভালো সাড়া পাব। বাকিটা আরও পরে বোঝা যাবে। আমরা কাজ করেছি এখন দর্শক ফলাফল দেবেন।
মুখোমুখি
একসময় আমার আর দেবের সিনেমা মুক্তি পেত। তবে এবার আলাদাভাবে আমরা পর্দায় হাজির হয়েছি। এখানে কেউ কারো মুখোমুখি নই। চাপও অনুভব করছি না। ও (দেব) আমার ভালো বন্ধু। আমি চাই পূজার মুক্তিপ্রাপ্ত চারটি সিনেমাই দর্শক সমানভাবে দেখুক। আমিও দেখব। মানুষ এখন হলমুখী হচ্ছেন, বাংলা সিনেমা দেখছেন। এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ইতিবাচক। দেব আমাকে দেবী চৌধুরাণীর জন্য শুভকামনা জানিয়েছে। ওর সিনেমার জন্য আমার শুভকামনা রইল।
ব্যস্ততা
আপাতত দেবী চৌধুরাণী নিয়ে ব্যস্ত আছি। পূজার পর নতুন একটি সিনেমার শুটিং শুরু করব। এখনো সিনেমার নাম চূড়ান্ত হয়নি। অক্টোবর থেকে শুটিং শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তখন বিস্তারিত বলা যাবে।
প্রযোজনায় আসবেন?
দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছি, আগ্রহ তো আছেই। ভবিষ্যতে একটা প্রযোজনা সংস্থা তৈরি করার পরিকল্পনা আছে। তবে কোনো তাড়াহুড়ো নেই। আপাতত আমি শুধুই অভিনেত্রী।
কটাক্ষ
সমালোচনা আমি কখনোই পাত্তা দেই না। যারা জীবন নিয়ে হতাশাগ্রস্ত তারা অনেক কিছুই মন্তব্য করেন। এসব আমলে নেওয়ার সময় নেই। আমি আমার মতো চলি। বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর ভুল মন্তব্য আসে। এটা দেখলে খারাপ লাগে। কিছু ভুঁইফোড় পোর্টাল আছে, যাদের নিবন্ধন পর্যন্ত নেই। তারাই এসব আজগুবি খবর ছড়ায়। অনেকেই ভুল তথ্য দিয়ে ভিউ বাণিজ্য করে সংসার চালায়। যেসব আমার জীবনে হয়ে গেছে, তা কখনো ফিরিয়ে আনতে পারব না। তবে এসব নিয়ে এখন আমার একদম মাথাব্যথা নেই। এখন কীভাবে পাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে কীভাবে তৈরি করছি, সেটিই আমার কাছে প্রথম অগ্রাধিকার।
ঢাকার সিনেমায় আর দেখা যাবে না?
অবশ্যই দেখা যাবে। আমি তো কাজ করতে চাই। ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে কাজ করব। বাংলাদেশে অনেক সিনেমা করেছি। সেগুলো থেকে বেশ সাড়াও পেয়েছি। আমার কাজের আগ্রহ আছে। সবকিছু ব্যাটে বলে মিলে গেলে কাজ করব।
২০২৬ সালের নির্বাচনে দেখা যাবে?
না। আপাতত সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। সময় সবকিছু বলে দেবে। এখন আমি অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চাই।