ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

ধর্মদহে একসঙ্গে চার কবর শোকে স্তব্ধ পুরো গ্রাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ১২:৪১ এএম

নাটোরের বড়াইগ্রামে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের আট সদস্যসহ মোট আটজনের প্রাণহানিতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে ধর্মদহ ফরাজীপাড়া গোরস্তানে জানাজা শেষে পাশাপাশি কবর দেওয়া হয় চার স্বজনকে। হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে কবরস্থানে তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

নিহতরা হলেনÑ ধর্মদহ গ্রামের মৃত জিল্লুর রহমানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (৫৫), তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন (৫০), তার ভাই শহিদুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আন্না (৫৫), তার আরেক ভাই মিজানুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন আনু (৫০), জাহিদুলের বোন প্রাগপুর গ্রামের রফেজ চৌধুরীর স্ত্রী ইতি খাতুন (৪০), একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে ও দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসের চালক সাহাব হোসেন (৩৫), মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আঞ্জুমানারা (৭৫) এবং তার মেয়ে সীমা খাতুন (৩৫)।

গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে সিরাজগঞ্জে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলার আইড়মারী এলাকার তরমুজ পাম্পের সামনে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে দ্রুতগামী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সবাই। খবর পেয়ে মুহূর্তেই ছুটে আসেন স্বজন-প্রতিবেশীরা। গ্রামের মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। যেন কেউ কিছু বলতে পারছিল না, নিঃশব্দ কষ্টে ডুবে ছিল চারপাশ।

দুর্ঘটনার পর নিহতদের মরদেহ প্রথমে বনপাড়া হাইওয়ে থানা ও হাসপাতাল থেকে শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাহিদুল, সেলিনা, আন্না ও আনুর মরদেহ পৌঁছায় ধর্মদহ গ্রামে। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার-পরিজ০ন। আশপাশের এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ছুটে আসেন তাদের একনজর দেখার জন্য।

একই গ্রামের সাহাব হোসেনের মরদেহও পৌঁছায় রাতে এবং স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। অন্যদিকে নিহত জাহিদুলের বোন ইতি খাতুন, শাশুড়ি আঞ্জুমানারা এবং শ্যালিকা সীমা খাতুনের মরদেহ তাদের নিজ নিজ গ্রামে নিয়ে গিয়ে রাতেই দাফন করা হয়।

জাহিদুল ইসলামের চাচাতো ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জানারুল ইসলাম জানান, তারা সবাই বুধবার সকাল ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। জাহিদুলের ছেলে সোহানের অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে যাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু কে জানত, এই যাত্রাই হবে তাদের জীবনের শেষ সফর।