রংপুরের পীরগঞ্জে অর্ধেকেরও কম জনবল দিয়ে চলছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানের ১১টি পদের মধ্যে পাঁচটিই শূন্য। আর একজন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে ও অন্য একজন ঢাকা চিড়িয়াখানায় থাকায় জনবল আছে মাত্র চারজন। এ কারণে জনবলসংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। বাধ্য হয়ে বেসরকারি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে খামারিদের।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি সার্জন, উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাসহ মোট ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে রয়েছেন হাতে গোনা ছয়জন। এর মধ্য থেকে একজন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) (ভিএফএ) রয়েছেন প্রশিক্ষণে এবং অন্য এক কর্মকর্তা রয়েছেন ঢাকা চিড়িয়াখানায়। ফলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন মাত্র চারজন। বাকি পাঁচটি পদ শূন্য।
জানা গেছে, উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন। এখানে নিবন্ধিত গাভির খামার ৪৫টি এবং অনিবন্ধিত গাভির খামার অন্তত এক হাজার ৩০০টি। ছাগলের খামার নিবন্ধিত একটি এবং অনিবন্ধিত প্রায় ১০০টি। অনিবন্ধিত ভেড়ার খামার রয়েছে ১৫টি। খামারগুলোতে গরুর সংখ্যা ৩১ লাখ ২৫ হাজার ৭টি, মহিষ ৫০০টি, ছাগল ১২ লাখ ১২ হাজার ১০টি, ভেড়া ২২ হাজার ৭২০টি। পশু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০টি পশু চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন খামারিরা। বর্তমানে উপজেলার অসুস্থ গৃহপালিত পশু-পাখির চিকিৎসার এখন একমাত্র ভরসা ভেটেরিনারি সার্জন। তিনি ছাড়া আর কেউ দায়িত্বে না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে বা চিকিৎসার কাজে হাসপাতালের বাইরে গেলে বন্ধ থাকে চিকিৎসাসেবা। ফলে হাসপাতালের ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
কয়েকজন সেবাগ্রহীতার সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, হাসপাতালে লোকবল কম থাকায় ভালো সেবা পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় অসুস্থ গরু-ছাগল নিয়ে এসে ডাক্তারের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়। হাসপাতালটিতে দীর্ঘদিন ধরে উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (কৃত্রিম প্রজনন) এফ এ (এআই) এবং উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার (প্রাণিস্বাস্থ্য) পদটিও শূন্য রয়েছে। এসব চিকিৎসককে সহায়তাকারী ড্রেসারের পদে শ্রী রিপন কুমার নামে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলেও তাকে সংযুক্তি দেখানো হয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানায়। অথচ তিনি এখান থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন।
ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, অসুস্থ প্রাণীর চাপ বেশি থাকায় একার পক্ষে সেবা দেওয়া কষ্টকর। অনেক সময় বড় প্রাণীদের হাসপাতালে আনা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা দিতে হয়। তখন হাসপাতাল ফাঁকা থাকে। হাসপাতালে দুই থেকে তিনজন ভেটেরিনারি সার্জন থাকলে আরও ভালো সেবা দেওয়া যেত।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল কবীর বলেন, আমি অল্প কিছুদিন আগে যোগদান করেছি। এখানে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও বর্তমানে পাঁচজন নিয়মিত অফিস করছেন। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। অল্পসংখ্যক লোক দিয়েই সাময়িকভাবে সেবা অব্যাহত রাখা হলেও অনেক সময় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :