দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি করে ১১৫ কোটি টাকার মুনাফা অর্জন করেছে।
কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক. রাব্বিক হাসানের গতিশীল নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি বিগত ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লাভের মুখ দেখেছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ১৯৩৮ সালে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর জাতীয়করণ হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান জানান, ‘চলতি অর্থবছরে কর্পোরেট ট্যাক্স বাদ দিয়ে নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকায়, যা গত বছরের আয় হয়েছে ৬৪ কোটি টাকা।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেরুর ইতিহাসে এটিই সর্বোচ্চ মদ বিক্রি এবং সর্বোচ্চ লাভের রেকর্ড।’
কেরুর ডিস্টিলারি ইউনিটে ৯ ধরনের দেশীয় মদ তৈরি হয় ইয়েলো লেবেল হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম। চলতি অর্থবছরের জুন পর্যন্ত স্পিরিট উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৬০ লাখ প্রুফ লিটার, যা পূর্বের বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
চিনি খাতটি দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকলেও, রাব্বিক হাসানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৭০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ৪ হাজার ৪৫২ টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ১৫০ টন আখ মাড়াই করেছে কেরু চিনিকল, যা শতকরা ৫.১০ ভাগ আহরণ হারে চিনি উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার ৫ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ চাষ হচ্ছে, যার মধ্যে কেরুর নিজস্ব খামারে ১ হাজার ৬২৫ একর এবং চাষিদের জমিতে রয়েছে ৩ হাজার ৯৩৭ একর। কৃষকদের থেকে আখ কেনা হয়েছে প্রতি মণ ২৪০ টাকায়। কৃষি খামারে সাথী ফসল হিসেবে আলু, মসুর, সরিষা, ধনিয়া ও মিষ্টকুমড়া চাষ করে বাড়তি আয় হয়েছে। এতে ৩২ বছর পর কৃষি খামারগুলো লাভজনক হয়েছে।
কেরুর বর্তমান সাফল্য প্রসঙ্গে কেরু এন্ড কোম্পানির (ডিস্টিলারির) জিএম মো. রাজিবুল হাসান বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান স্যারের সঠিক পরিকল্পনা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় মিলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চাষিরাও এখন আঁখ চাষে আগ্রহী। আগামীতে আরও ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ‘আঁখের মুল্যে বৃদ্ধি করা হয়েছে, উন্নত মানের বীজ ও সার সরবরাহ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আখ চাষে তাদের আগ্রহী করেছি। যার ফলেই চাষি ও কেরু উভয়ই লাভবান হয়েছে। কেরুর জৈব সার ব্যবহারে কৃষকরা ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন এবং এটি সারা দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কোম্পানির অন্যান্য পণ্য যেমন ভিনেগার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জৈব সার এবং স্পিরিট বিক্রিতেও প্রবৃদ্ধি এসেছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যখন দেশের অন্য চিনিকলগুলো মিলিয়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকারও বেশি লোকসানে রয়েছে, সেখানে কেরু-ই একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান।