ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫

দলবদলে ফুটবলারদের বাজার মন্দা

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ০২:৪৮ এএম

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থ সংকটে রয়েছে ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ ক্লাবগুলো। এতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে চলমান নতুন ফুটবল মৌসুমের দলবদলেও। দলবদল শেষ হতে আর দুই সপ্তাহের মতো বাকি আছে। কিন্তু পেশাদার লিগে অংশ নেওয়া ক্লাবগুলোর আর্থিক সংকটের কারণে ফুটবলারদের জন্য উপযুক্ত বাজার মূল্যে চুক্তি করাটাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত বছর সরকারের পট পরিবর্তনের পর থেকেই ফুটবল ক্লাবগুলো সংকটে পড়েছে। গত মৌসুমে ভালো পারিশ্রমিক পাননি ফুটবলাররা। অনেক কম পারিশ্রমিকে ক্লাবগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা। আবার অনেক ফুটবলার কোনো ক্লাবই পাননি। যারা ক্লাব পেয়েছেন, তাদের অনেকে আবার পারিশ্রমিক পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। এবারের মৌসুমেও দলবদলের বাজার মন্দা। ক্লাবগুলোর বাজেট অনেক কমে গেছে।

ক্লাব দল গঠনের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে। বিশেষ করে প্রিমিয়ার লিগের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের কথাই বলা যায়। ধারণা করা হয়েছিল, প্রথমবারের মতো পেশাদার লিগের শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়া মোহামেডান বিগ বাজেটের দল গড়বে। কিন্তু অর্থাভাবে তাদের দলের সবচেয়ে বড় তারকা সুলেমান দিয়াবাতেকেই ধরে রাখতে পারেনি মোহামেডান। খেলোয়াড় রদ-বদল হলেও কম বাজেটেই দল গঠন করছে চ্যাম্পিয়নরা।

অন্যদিকে, গত বছর সংকটের কারণে তো লিগের প্রথমার্ধে কোনো বিদেশি ফুটবলার ছাড়াই খেলে আবাহনী। দ্বিতীয় পর্বে বিদেশি নিলেও কম বাজেটের দল গড়েছিল ক্লাবটি। এবার এরই মধ্যে তারা প্রাক-মৌসুমে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। তাদের সামনে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের খেলা রয়েছে। আবাহনী দেশি-বিদেশি মিলে বেশ কিছু ফুটবলার দলে নিলেও তারাও যে বড় বাজেটের দল গঠন করছে, তা কিন্তু নয়। তা ছাড়া অন্য ক্লাবগুলো বাজেট কমিয়েছে।

গত মৌসুমে দারুণ খেলেছে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। ক্লাবটি সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমের তুলনা এবার ক্লাবটির বাজেট ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা কমে গেছে। ফর্টিস এফসিও গত মৌসুমের চেয়ে ৫০-৬০ লাখ টাকা কম বাজেটে দল গঠন করছে। বসুন্ধরা কিংস বাদে অপর ক্লাবগুলো কোনোমতে মাঝারি মানের দল গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

বাজেট কমিয়ে ক্লাবগুলো তরুণ খেলোয়াড়দের দিকে ঝুঁকছে। কম বাজেটে ভালো মানের খেলোয়াড় দলে নেওয়ার লক্ষ্য ক্লাবগুলোর। প্রতি দলে বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচজন অনূর্ধ্ব-২০ খেলোয়াড় নেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার খেলোয়াড়দের চুক্তিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ না থাকাও সিনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য কম পারিশ্রমিকের প্রস্তাবের কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। সিনিয়র কিছু ফুটবলারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ক্লাবগুলো থেকে খুব একটা ভালো প্রস্তাব পাচ্ছেন না তারা। ফিটনেস ধরে রাখার জন্য খাবার, খেলার সরঞ্জাম ও আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে একজন পেশাদার ফুটবলারের সারা বছর ধরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়, সেই তুলনায় পারিশ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। ক্লাবগুলো কম বাজেটের দল গঠন করা কম পারিশ্রমিকেই চুক্তি করতে হচ্ছে ফুটবলারদের। অনেকে আবার গত মৌসুমের পারিশ্রমিকও পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

সব মিলিয়ে ফুটবলারদের জন্য দলবদলের এ মৌসুমটাও ভালো যাচ্ছে না। দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন দেশের ফুটবলাররা।