ভোলার চরফ্যাশনের হাজারো জেলে সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। টানা কয়েক দিন ধরে বঙ্গোপসাগর, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে নদীতে নামতে পারছেন না তারা। ফলে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে এসব নদীনির্ভর জেলেদের জন্য।
চরফ্যাশনের নুরাবাদ, আহাম্মদপুর, নীলকমল, মুজিবনগর, চরকচ্চপিয়া, শশীভূষণ, আবদুল্লাপুর ও হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের জেলে পরিবার বর্তমানে দিশেহারা। স্থানীয় জেলেরা জানান, গত কয়েক দিন টানা ঝড়ো হাওয়া, মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত ও নদীতে বড় ঢেউয়ের কারণে মাছ ধরার অনুকূল পরিবেশ নেই। বিশেষ করে গভীর নদী বা সাগরে নামা এখন রীতিমতো জীবন ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক জেলে রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১০৫ জন। সাগরগামী জেলের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৬১ জন। সাগরগামী ট্রলার রয়েছে ১ হাজার ৩৬৫টি। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে সাগরগামী জেলেরা তীরে নিরাপদে ফিরেছেন এবং তারা যার যার মৎস্য ঘাটেই রয়েছে। বৈরী আবহাওয়া শেষ হলেই তারা ঘাট ত্যাগ করেই মাছ শিকারে সাগরে যাবেন।
উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ শিকারই বহু মানুষের একমাত্র জীবিকা। বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানসিক চাপও বাড়ছে এসব পরিবারের ওপর। অনেকেই বলছেন, সরকারিভাবে যদি সহায়তা না আসে, তাহলে পরিবার নিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
স্থানীয় জেলে মো. হারুন জানান, ‘বছরের এ সময়টাই মাছ ধরার মৌসুম। নদীতে ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহে আবহাওয়া খারাপ থাকায় নদীতে নামতে পারছি না। ফলে ইনকাম একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে।’
আরেক জেলে সাহেব আলী বলেন, ‘ট্রলার ঘাটে বেঁধে রেখেছি, কিন্তু সেটা চালানো যাচ্ছে না। দিনে দিনে ধার-দেনা বাড়ছে। বাজারে গিয়ে হাত-পা গুটিয়ে আসতে হয়, কারণ টাকা নেই।’
জেলেদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ ব্যবসায়ীরাও। স্থানীয় বাজারে মাছের সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারাও চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
সামরাজ মৎস্যঘাটের আড়ৎদার ইমরান হোসেন জানান, ‘আমার পরিচালিত মৎস্য আড়ৎটিতে কয়েক লাখ টাকার চালান খাটিয়েছি। জেলেদের দাদন দিয়ে রাখতে হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা তাদের কাক্সিক্ষত ইলিশ পাচ্ছে না। জেলেরা নদী বা সাগরে মাছ পেলে আমরা আড়ৎদাররা সেই মাছ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করি। তবে সম্প্রতি সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পারছে না। জেলেরাও ঋণে জর্জরিত আমরা আড়ৎ মালিকরাও লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
চরফ্যাশন মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, কয়েক দিন ধরে গভীর সাগরে নিম্নচাপ থাকার কারণে নদী ও সাগরে মাছ ধরা অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সতর্কসংকেত থাকায় সব জেলেকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা জেলেদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কারণ বিগত দুর্যোগে সময়ে অনেক জেলে প্রাণ হারিয়েছেন।’