ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

৮ কোটি টাকায় বাঁশের সাঁকো!

বালাগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৮:৫৭ এএম

সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি ব্রিজ এখন পরিণত হয়েছে এক টুকরো হতাশার প্রতীক।

টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রায় ৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে পেলেও মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ করে বাকি টাকা তুলে পালিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। নির্মাণকাজ থমকে যাওয়ায় এলাকাবাসীর একমাত্র ভরসা এখন একটি পুরোনো বাঁশের সাঁকো। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে এটিকেই এখন বলছেন ‘৮ কোটি টাকার বাঁশের সাঁকো।’

স্থানীয় ও প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলা বাজার টু দনারাম সড়কের বেথরী নদীর ওপর এলজিইডির অধীনে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার ২৪৯ টাকা বরাদ্দে ব্রিজটি নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয় শেরপুরের ধ্রুব মোশারফ (জেবি) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৪ সালের আগস্টের মধ্যে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা তো দূরে থাক, বরং প্রায় দুই বছর ধরে কাজ বন্ধ রেখে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে ঠিকাদার পকেটে তুলেছেন বরাদ্দের প্রায় ৪০ শতাংশ।

এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, ঠিকাদার কাজ শুরু করলেও বর্ষা ও শুকনো মৌসুমের অজুহাত দেখিয়ে বারবার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখেন। সর্বশেষ কিছু সামগ্রী ফেলেই তিনি কার্যত এলাকা ছেড়ে গেছেন। ফলে স্থানীয়দের দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ মানুষ নৌকা ও বাঁশের সাঁকোর ওপর নির্ভর করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।

বাংলা বাজারের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান আনু বলেন, ‘এটাই আমাদের এলাকার প্রধান চলাচলের পথ। কিন্তু সঠিক তদারকি না থাকায় ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করছিলেন। বারবার বললেও কেউ কথা শোনেনি। এখন বছরের পর বছর আমাদের এ দুর্ভোগ সয়ে যেতে হচ্ছে।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মুজেফর আলী বলেন, ‘ঠিকাদার কাজ ফেলে পালিয়ে গেছেন। দফায় দফায় বলার পরও ব্রিজের কাজ শেষ হয়নি। বিষয়টি বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছি।’

ঠিকাদার ধ্রুব মোশারফ বলেন, ‘দেশের পট পরিবর্তন ও বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করছি, সময় পেলে কাজ শেষ করব।’

বালাগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ না করায় আমরা একাধিকবার তাকে তাগাদা দিয়েছি। কাজ বন্ধ থাকায় চুক্তি বাতিলের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’