চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সিজারিয়ান অপারেশনের ত্রুটিজনিত ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর উত্তেজিত স্বজনরা একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার ঠাকুর বাজার এলাকার শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গতকাল দুপুরে হাসপাতালটি অবরুদ্ধ থাকায় ভেতরে থাকা অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব নিজমেহার কবিরাজ বাড়ির প্রবাসী দিদার হোসেনের স্ত্রী উম্মে হাসনা রিপা (২৯) গত ২৬ জুন শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন।
অপারেশনটি করেন শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তানজিনা সুলতানা। অন্যান্য রোগীর মতো তাকেও কেবিনে রাখা হয় এবং চারদিন পর ৩০ জুন ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।
তবে বাড়ি যাওয়ার পর রিপার ব্যথা কমার পরিবর্তে আরও তীব্র হতে থাকে। অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুলাই দুপুরে তাকে পুনরায় একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে রেফার করা হলে স্বজনরা জানতে পারেন, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় চিকিৎসক ভুলবশত রিপার মূত্রথলি কেটে ফেলেছেন এবং কোনো সঠিক চিকিৎসা না করেই তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।
এরপর রোগীকে বাঁচাতে পরিবারের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। ২৬ জুলাই ঢাকার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিপাকে। পরদিন রিলিজ পেয়ে ২৮ জুলাই স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে রক্ত দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে, যেখানে গত শুক্রবার (১ আগস্ট) রাত আড়াইটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শনিবার সকালে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স শাহরাস্তি পৌঁছালে উত্তেজিত স্বজনরা শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন ও প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসার বিষয়টি গোপন করেছে। না জেনে এক হাসপাতাল থেকে আরেকটিতে নিয়ে ঘুরতে হয়েছে। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যাওয়ায় বারবার রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসকদের চরম অবহেলার কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।একই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ রয়েছে বলে জানান উপজেলার হাঁড়িয়া গ্রামের আরেক রোগীর স্বজন।
তিনি বলেন, দুই মাস আগে আমার ভাবি নাসরিন আক্তার (২৮) এখানে সিজার করান। চারদিন পর রিলিজ নেওয়ার পর হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হয়। হাসপাতালে ফের আনা হলে তাকে শুধু ব্যথানাশক দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সমস্যার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। পরে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এখনো তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
শাহরাস্তি থানার ওসি মো. আবুল বাসার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত হাসপাতালে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আকলিমা জাহান বলেন, এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :