পলি বালা গোপালগঞ্জ পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কিন্তু নামে পৌরসভা হলেও নেই কোনো সুযোগ-সুবিধা। কোমলমতি শিশুশিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয় দুই কিলোমিটার ঘুর পথে।
বর্ষা এলেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে স্কুলে যাতায়াতের একমাত্র সহজ পথটি। এই সংকটের জন্য শিশুরা কাঁদা-পানি ঘেটে, অভিভাবকেরা ঘাড়ে করে বা কোলে করে এগিয়ে দিয়ে আসতে হয় স্কুলে। স্কুল ছুটি হলেও সেই একই দুর্দাশা। মাত্র ৩০০ মিটার সড়ক না থাকায় এই অবস্থা তাদের। এই সড়কটুকু নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর।
জানা যায়, গোপালগঞ্জ শহরের কাড়ারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৬ জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন এভাবে পানি কাদা ঘেটে স্কুলে যায়। অভিভাবকদের কোলে-পিঠে করে পার হতে হয় পানির রাস্তা। যদি শুকনা রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতে হয় তাহলে অন্তত দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘুরতে হবে। অথচ তাদের বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব মাত্র কয়েকশ মিটার। বর্ষা এলেই পানিতে ডুবে যায় ওই এলকার পরামানিক বাড়ি থেকে পোদ্দার বাড়ি পর্যন্ত ছোট্ট এই মাটির সড়কটি। বর্ষাকালে অন্তত চার মাস শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বর্ষা মৌসুমে এই এলাকার জলাবদ্ধতা যেন এক নিত্যদিনের যন্ত্রণা। বছরের অন্তত চার মাসই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের চলাচল দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে কারারগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭৬ শিক্ষার্থীকে স্কুলে যেতে নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। মাত্র ৩০০ মিটার রাস্তার অভাবে শিক্ষাজীবন থমকে যেতে বসেছে এই এলাকার শিশুদের। শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এই অংশটুকু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
কারারগাতি উত্তরপাড়ার বাসিন্দা পলি বালা বলেন, পানির কারণে আমি আমার বাচ্চাকে নিয়ে স্কুরে যেতে পারছিনা। এই সড়কটি মাত্র ৩০০ মিটার নির্মাণ করা হলে বর্ষাকালে বাচ্চারা নিজেরাই স্কুলে যাতায়াত করতে পারত।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এলাকা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। শুনেছি পৌরসভা হলে নাগরিকরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু আমরা পৌরসভার কোনো সুযোগ-সুবিধাই পাইনা।
একই এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিত বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অনেক আগে থেকেই আমরা এই ৩০০ মিটার রাস্তা দাবি জানিয়ে আসছি। পৌরসভায় যে যখন মেয়র ছিল, তাকে বললে তিনি রাস্তাটি করে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু, সেটি শুধু আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমাদের সমস্যার সমাধানও হয়নি বরং ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
সদর উপজেলার কারারগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, বছরের পর বছর ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা বর্ষাকাল আসলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। এ সময়টা আসলে ক্লাসে হাজিরার সংখ্যা কমে যায়। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো স্কুলে না আসায় তাদের শিক্ষার মান দিন দিন কমে যাচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ জ্যোৎস্না খাতুন বলেন, শিশুরা যেন ঠিকমতো ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে এ বিষয়টি নিয়ে আমি পৌরসভাসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করব।
আপনার মতামত লিখুন :