দেশসেরা সবজি উৎপাদক জেলা যশোর। জেলার চুড়ামনকাটি, হৈবতপুর, কাশিমপুরসহ ৩৩ প্রকার সবজির এই রাজ্য সারা দেশে সবজি সরবরাহ করে। কিন্তু এই সবজির মাঝেই এখন পাওয়া যাচ্ছে মৃত্যুর উপকরণ-‘বিষ’! অধিক ফসল, অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্প্রের পর কোনো অপেক্ষাকাল না মেনে সবজি তুলে নেওয়া হচ্ছে বাজারজাতের জন্য।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর যশোর জেলায় ১৬,৫০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে চুড়ামনকাটি (৮২৮ হে.), হৈবতপুর (১৬৩০ হে.), কাশিমপুর (৫৫৩ হে.) ইউনিয়নে। দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি হয় এখানকার সবজি। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। সারি সারি সবুজখেত আর সতেজ সবজির আড়ালে লুকিয়ে আছে বিষের মারাত্মক উপস্থিতি। চাষিরা বিকালের দিকে বেগুন, শিম, ফুলকপি ও শাকে বিষ ছিটিয়ে পরদিন ভোরেই বাজারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সেই সবজি।
কৃষকদের অভিযোগ, বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগ করেও ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। চাষি আতিকুর রহমান, মিন্টু মিয়া, জামাল উদ্দিন, আশাদুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, ‘ফেরোমন ফাঁদ দিয়েও কাজ হচ্ছে না, বিষ না দিলে সবজিতে পোকা লেগে যায়, চেহারা নষ্ট হয়।’
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যেসব কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- রিনকর্ড, সিমবুন, সুমিসাইডিন, হেপ্টাক্লোর, থায়াডিন, ডিডিটি, নগস, সুমিথিয়ন, ডাইমেক্রন, ম্যালাথিয়ন, অ্যারোমাল ইত্যাদি। এসব বিষ প্রয়োগের পর অপেক্ষাকাল ৩ দিন থেকে শুর” করে ৬ মাস পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু যশোরে অনেক ক্ষেত্রেই স্প্রের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই সবজি বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, ‘এসব বিষাক্ত সবজি কিডনি, লিভার, ক্যানসারসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়ম না মেনে বাজারজাত করাটা মানুষের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়ার সমান।’
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাষিদের সচেতন করছি। আইপিএম ও ফেরোমন ফাঁদের মতো বিকল্প পদ্ধতির প্রচার চলছে। তবে এখনো কিছু চাষি অতিরিক্ত কীটনাশকে নির্ভর করছেন, বিশেষত বেগুন ও শিম চাষে।’ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, উঠান বৈঠক, মাঠ দিবস ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের সচেতন করা হচ্ছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।
সবজি আমাদের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। অথচ মুনাফার লোভে বিষ মিশিয়ে তা মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে। চাষিদের যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি বাজার মনিটরিং, কৃষি বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর তদারকিও এখন সময়ের দাবি।