রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলে ভয়াবহ পানি বৃদ্ধি ও নদীভাঙনের ফলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার মানুষ। সরেজমিনে জানা যায়, ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি চরে বসবাসরত সাড়ে ৩ হাজার পরিবারের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এক চর থেকে অন্য চরে যাতায়াতে এখন একমাত্র ভরসা টিনের তৈরি ছোট ডিঙি নৌকা।
দিয়াড়কাদিরপুর চরে অন্তত ২৫টি পরিবার সম্পূর্ণভাবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নেই কোনো চলাচলের রাস্তা, নেই ন্যূনতম বাজার সুবিধাও। এমনই দুর্দশা আরও ১৪টি চরের মানুষের।
চরের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস কৃষিকাজ। পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছেন।
দিয়াড়কাদিরপুর চরের বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম জানান, ‘আমি, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অন্যের কাছ থেকে বাৎসরিক ভাড়ায় জমি নিয়ে দুটি ঘর তৈরি করেছি। এখন গরু-ছাগল নিয়ে চরম বিপদে আছি।’
তার স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, ‘চাষের কাজ নেই। কোনো সময় জাল দিয়ে মাছ ধরে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছি।’
চরের মানুষ প্রতিবছর বাৎসরিক চুক্তিতে ২০-২৫ হাজার টাকায় ২০ কাঠা জমি ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। অথচ এখন সেই জমিও পানির নিচে।
পানির বাড়বাড়ন্তে চৌমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বর জালাল উদ্দিন জানান, দিয়াড়কাদিরপুর, টিকটিকিপাড়া, চকরাজাপুর ও কালিদাসখালির কিছু অংশ মিলিয়ে এই ওয়ার্ডে প্রায় ৩০০ পরিবার ও ১,০৩৫ জন ভোটার রয়েছে। এখানকার বেশিরভাগ জমি নিচু ও ফসলি হওয়ায় প্রতিবছরই এই ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, ‘পদ্মার চরের অন্তত ৩ হাজার ৬০০ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙনের কারণে বহু পরিবার গৃহহারা হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।’
চরের মানুষের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও আশ্রয়ের সংকটে দিন পার করছে তারা। জরুরি ভিত্তিতে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পৌঁছানো এখন সময়ের দাবি।