বৃহস্পতিবার, ০৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ১০:৩৪ এএম

কান্না থামছে না শহিদ মেরাজের মায়ের

পুত্র শোকে স্বামীও চলে গেছেন পরপারে

সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৫, ১০:৩৪ এএম

পুত্র শোকে স্বামীও চলে গেছেন পরপারে

গত বছরের এদিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন লালমনিরহাটের শহিদ মেরাজ। দিনটির কথা স্মরণ করে শহিদ মেরাজের মা মোহছেনা বেগমের কান্না যেন থামছে না। বাড়ির পাশে স্বামী ও ছেলের কবর চোখে পড়লেই দু’চোখ বেয়ে জল আসে তার। ছেলের কথা মনে করে কবরের পাশে গিয়ে কেঁদে উঠেন দুখিনী এই মা।


এদিকে, পুত্র শোকে অসুস্থ হয়ে স্বামী আব্দুস ছালামও পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে। বড় ছেলে আর স্বামীকে হারিয়ে এখন দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন শহিদ জননী মোহছেনা বেগম। সংসারের খরচ মেটাতে বাধ্য হয়ে শহিদ মেরাজের স্কুলপড়ুয়া ছোট ভাই মেজবাউল স্কুলের ফাঁকে ছোট্ট একটি দোকান চালাচ্ছে। 


শহিদ মিরাজুল ইসলাম মেরাজের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের বারঘড়িয়া গ্রামের আনসার খাঁর পুকুরপাড় এলাকা। 


গতকাল শহিদ মেরাজের বাড়িতে দেখা যায়, ডোরা নদীর পাড় ঘেঁষা বাড়ি তাদের। বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটি সম্প্রতি সরকারিভাবে পাকা করে দেওয়া হয়েছে। চাচা আবুল কালামের জমিতে একটা লম্বা টিনশেড ঘরের মধ্যে বেড়া দিয়ে দুটি কক্ষ করা হয়েছে। সেই দুটি কক্ষ নিয়েই শহিদ মেরাজের বাড়ি। পাশের টিনে ঘেরা বাথরুম। অপর প্রান্তে টিনের চালা দিয়ে সেখানে রান্না করেন শহিদ জননী মোহছেনা বেগম। বইগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে টেবিলে।  মেরাজের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয়রা জানান, ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে সিএনজিচালক বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় গিয়েছিলেন মেরাজ। সেখানে ভাড়া বাসায় থাকত মেরাজের পুরো পরিবার। ঢাকার দনিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছিলেন মেরাজ। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি বিকাশের দোকানের কর্মচারী ছিলেন তিনি। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা, ছোট ভাইয়ের লেখাপড়াসহ পুরো সংসার চলত  মেরাজের আয়েই।


গত বছর ৫ আগস্ট হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে মাছের আড়ত এলাকায় আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন মেরাজ। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তিনি। এ অবস্থায় মেরাজকে স্থানীয়রা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। ৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।


মেরাজের মৃত্যুতে নিভে যায়, তাদের সংসারের আলো। উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে পুরো পরিবার। কষ্টার্জিত টাকায় কেনা পাঁচ শতাংশ জমিতে বাড়ি করার স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু মেরাজের মৃত্যুতে মাঝপথে থেমে যায়, সেই স্বপ্ন। জমিটুকুও হয়ে যায় বেদখল। দলিল দিলেও দখল বুঝিয়ে দেননি প্রতিবেশী দুলাল। সে জমি দখলে নিতে থানা-পুলিশ করেও সুফল মেলেনি। টাকার কাছে হারতে হয়েছে তাদের। পড়ালেখা শেষে চাকরি করে বেদখল জমি উদ্ধার করে বাড়ি করে, তবেই ঢাকা থেকে ফেরার স্বপ্ন ছিল মেরাজের।


ছেলের মৃত্যুর শোকে অসুস্থ বাবা আব্দুস ছালাম বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা পান। সেই টাকায় মহিষখোঁচা বাজারে একটি খাসজমির ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় কয়েকজন। সেই জমিতে দোকান করে ব্যবসা শুরু করেন আব্দুস ছালাম। কিন্তু পুত্র শোকে হঠাৎ তিনিও স্ট্রোকে মারা যান। আবারও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ডুবে যায় মেরাজের পরিবার।


উপার্জনক্ষম বড় ছেলে আর স্বামীকে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মোহছেনা, তার ছেলে আর শাশুড়ি সালমা খাতুন। এই প্রতিবেদকের সামনে মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে বেদখলে থাকা পাঁচ শতাংশ জমি উদ্ধারে প্রশাসনের কছে আকুতি জানিয়েছেন জুলাই আন্দোলনে শহিদ মিরাজুল ইসলাম মেরাজের মা মোহছেনা বেগম।  


শহিদ মেরাজের দাদি সালমা খাতুন বলেন, ‘আগে মেরাজ আমার ওষুধ কিনে দিত, চিকিৎসার দেখভাল করত। তার মৃত্যুর পরে আমার ছেলে আব্দুস ছালাম ওষুধের ব্যবস্থা করত। এখন ছোট নাতি স্কুলের ফাঁকে দোকান করে যা আয় করছে, তা দিয়ে কোনোমতে খাবার জোটে।’


শহিদ মেরাজের ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শোনা যাচ্ছে, শহিদ পরিবারকে লাখ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে প্রথম দফায় পাঁচ লাখ টাকা আর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা ছাড়া কিছুই পাইনি। আমাদের কেনা জমি বেদখল হয়ে আছে। সেই জমিও উদ্ধার করে দিতে পারেননি সরকারি কর্মকর্তারা। ভাইকে কারা গুলি করল? তা জানতে চাই। খুনিদের দ্রুত বিচার চাই।’ 
মেরাজের মা মোহছেনা বেগম বলেন, বাড়ির জন্য কেনা জমিটুকু দখল পেতে থানা-পুলিশ করেছিল মেরাজ আর তার বাবা। কিন্তু টাকার কাছে তারা হেরে গেছেন।


তিনি আরও বলেন, ‘বাজারের সরকারি জমিতে দোকান করার সুযোগ পেয়েছি। সেই দোকান থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলছে কোনোমতে। এখন কেউ আমাদের তেমন খবর নেয় না। আমি আদরের ছেলের মৃত্যুর কয়েক মাসের ব্যবধানে স্বামীকে হারিয়েছি। আমার মতো দুঃখী এ দুনিয়ায় নেই কেউ-এ বলে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।’

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!