**** দৈনিক ক্ষতি ৩ কোটি টাকা
**** চালুর দাবিতে মানববন্ধন
জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ যমুনা সার কারখানা প্রায় ২০ মাস ধরে বন্ধ। এতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে। ভরা আমন মৌসুমে এই বন্ধ অবস্থার কারণে একদিকে ইউরিয়া সার সংকটের আশঙ্কায় ভুগছেন কৃষকরা। অন্যদিকে প্রতিদিন হাজিরাভিত্তিক কাজ করা প্রায় তিন হাজার শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে বেকারত্বে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ পরিস্থিতির প্রতিবাদে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ব্যবসায়ী, ডিলার ও শ্রমিকরা গত শুক্রবার সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমানের পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে ঘণ্টাব্যাপী এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত যমুনা সার কারখানা দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা ছাড়াও প্রায় ২০টি জেলার ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটিয়েছে। এটি দেশের একমাত্র দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। নরসিংদীর ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এটিই ছিল দেশের সর্ববৃহৎ কারখানা।
প্রতিষ্ঠার শুরুতে কারখানাটি দৈনিক প্রায় ১ হাজার ৭০০ টন সার উৎপাদন করতে সক্ষম ছিল। তবে ধীরে ধীরে গ্যাস সরবরাহ কমতে থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকে। কখনো পূর্ণমাত্রায়, কখনো অর্ধেকে-এভাবেই চলতে থাকে উৎপাদন।
২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি কারখানায় গ্যাসের চাপ কমিয়ে দিলে পুরোপুরি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, বিসিআইসির অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং প্রভাবশালী এক সিন্ডিকেটের প্রভাবে যমুনা কারখানার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে ঘোড়াশাল-পলাশ কারখানায় গ্যাসের চাপ বাড়ানো হয়েছে।
কারখানার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ২০ মাসে প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকা লোকসানের কারণে মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে বহু মূল্যবান যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে মরিচা ধরেছে। এগুলো পুনরায় সচল করতে অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কারখানা বন্ধ থাকায় প্রায় তিন হাজার দৈনিক হাজিরাভিত্তিক শ্রমিকের জীবন থমকে গেছে। তাদের অনেকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। নিয়মিত কাজ না থাকায়, তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম অনিশ্চয়তা।
গত শুক্রবার সকালে বিসিআইসির চেয়ারম্যান কারখানাটি পরিদর্শন করেন। যমুনা সার কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘চেয়ারম্যান মহোদয় কারখানা ঘুরে গেছেন। অক্টোবরের মাঝামাঝি গ্যাস সংযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কারখানা চালুর উপযোগী আছে, গ্যাস পেলেই উৎপাদন শুরু হবে।’
ভরা মৌসুমে কৃষকদের কাছে ইউরিয়া সারের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যমুনা সার কারখানাকে দ্রুত চালু করা গেলে শুধু কৃষকের সুরক্ষা নয়, রাষ্ট্রীয় কোষাগারেরও বড় ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন