রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:০৮ এএম

বাড়িতে বিষধর সাপের বাসা

জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৬:০৮ এএম

বাড়িতে বিষধর সাপের বাসা

  • জুলাই মাসেই সাপের কামড়ে ১১ জনের মৃত্যু
  • আক্রান্তদের মাত্র ২৭ শতাংশ হাসপাতালে যান
  • রয়েছে গোখরো, কালাচ, রাসেলস ভাইপারের মতো বিষধর সাপ
  • জুলাইয়ে এ অঞ্চলে পিটিয়ে মারা হয়েছে ৩০০টির বেশি সাপ
  • নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বসতবাড়িতে আসছে সাপ
  • বর্ষা মৌসুমে সাপের কামড়ে মৃত্যু বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে
  • এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বাড়ছে আতঙ্ক

দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে রাজশাহী অঞ্চলে সাপের আনাগোনা বেশি। প্রতিবছরই মাঠে-ঘাটে বিষধর সাপের কামড় খেয়ে কৃষকসহ মারা যাচ্ছেন অনেকে। আবার বিভিন্ন কারণে বসতবাড়িতেও সাপের আড্ডা জমছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে সাপের উৎপাত বেশি হয়। কারণ এই মৌসুমে এ অঞ্চলে সংকুচিত হয়ে পড়ে সাপের স্বাভাবিক আবাসস্থল। জঙ্গল, ঝোপঝাড় ও নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাপগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়িতে চলে আসে। এ কারণে দেখা দেয় খাদ্যসংকট। একই সঙ্গে চলে প্রজননকাল। ফলে এই সময় বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

গত ২৯ জুলাই (মঙ্গলবার) রাত ১১টার দিকে রাজশাহীর পুঠিয়ার হাড়োখালী গ্রামে নিজ বাড়িতে সাপের কামড়ে শুকুর আলী (৫৫) নামের এক হাজী মারা গেছেন।  তিনি ওই গ্রামের মৃত তছির উদ্দিনের ছেলে।

 স্থানীরা জানান, ২৯ জুলাই রাত ১১টার দিকে শুকুর আলীর স্ত্রী বাড়ির মধ্যে হাঁস-মুরগি রাখার ঘরের মুখ বন্ধ করতে গিয়ে বিষধর গোখরো সাপ দেখতে পান। পরে তার স্বামীকে ডেকে নিয়ে সাপটি মারতে যান। এ সময় ভারী লাঠি দিয়ে শুকুর আলী সাপটিকে আঘাত করেন। এর মধ্যেই সাপটি শুকুর আলীকে অজান্তে হাতে কামড় দেয়। সাপে কামড়ালেও তখন তিনি বুঝতে পারেন না। পরে যখন শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়, সে সময় তাকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 সরকারি হিসাব মতে, গত জুলাই মাসেই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নওগাঁ জেলায় সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জেই প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে, মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ, আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ২৭ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে যান। বাকিরা ওঝা বা কবিরাজের শরণাপন্ন হন, ফলে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হয় না।

স্বাস্থ্য বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের ১১ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে মাত্র ১১ দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাপের কামড়ে ৭ জন মানুষ মারা গেছেন। মৃতরা জেলার নাচোল, ভোলাহাট এবং গোমস্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। এ ছাড়া রাজশাহীর তানোর এবং গোদাগাড়ী উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। নওগাঁ সদর এবং নিয়ামতপুর উপজেলায় শিশুসহ আরও দুইজন মারা গেছেন। 

এদিকে সাপ রক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টার’ জানিয়েছে, আতঙ্কিত হয়ে শুধু জুলাই মাসেই রাজশাহী অঞ্চলে ৩০০টিরও বেশি সাপ পিটিয়ে মারা হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলাতেই মারা হয়েছে ২৪৩টি। এ ছাড়া ২৫৭টি সাপ জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, সাপগুলোর বেশির ভাগই আহত।

মারা যাওয়া সাপগুলোর মধ্যে ছিলÑ গোখরো, পদ্ম গোখরো, কালাচ, রাসেলস ভাইপার, দাড়াসসহ বিভিন্ন বিষধর ও নির্বিষ প্রজাতি। প্রাণিবিদ ও পরিবেশবিদরা বলছেন, এভাবে সাপ হত্যার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো. সালেহ রেজা বলেন, ‘সাপ প্রকৃতির বন্ধু। প্রতিবছর ইঁদুর ফসলের প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষতি করে। সাপ কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্যা বাড়বে, কৃষি উৎপাদন কমে যাবে এবং খাদ্যচক্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাপের বিষ থেকে ৪২টি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ হারিয়ে গেলে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বড় সংকট দেখা দেবে।’

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. শংকর কে বিশ্বাস বলেন, ‘বৃহত্তর রাজশাহীসহ খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলা থেকেও আমাদের হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী আসে। কিন্তু অধিকাংশই হাসপাতালে আসেন দেরিতে। অনেকে প্রথমে কবিরাজের কাছে যান। তখন আমরা রোগীকে বাঁচাতে পারি না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘অ্যান্টিভেনম যথেষ্ট মজুত আছে। কিন্তু মানুষ হাসপাতালে না এসে ওঝার কাছে যান বলে মৃত্যুর হার বাড়ছে।’

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাপে কাটা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছি। মানুষ সচেতন হলে মৃত্যুর হার কমবে।’

স্নেক রেসকিউ অ্যান্ড কনজারভেশন সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা বোরহান বিশ্বাস জানান, ‘রাজশাহীর গোদাগাড়ী, তানোর, বাঘা, চারঘাট, বাগমারা; চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, ভোলাহাট, গোমস্তাপুর এবং নওগাঁর সাপাহার, পোরশা, মহাদেবপুর, মান্দা, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় সাপের বিস্তার বেশি। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপার বেশি পাওয়া যায়। সাপ মারার প্রবণতা যত দিন থাকবে, তত দিন সাপ বিলুপ্তির দিকে যাবে। কামড়ের পর চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে মানুষ সাপ মারবে না।’

তিনি বলেন, ‘গরম বা শীত মৌসুমে সাপ সাধারণত মাঠে, জঙ্গল বা ঝোপঝাড়ে থাকে। তবে বর্ষা মৌসুমে সাপের স্বাভাবিক আবাসস্থল সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ কারণে ওই এলাকার সাপগুলো নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বসতবাড়িতে চলে আসে। খাদ্যের সংকট, প্রজনন ও ডিম-বাচ্চার জন্যও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। এ কারণে এই সময় সাপের উৎপাত ও বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!