ঢাকা শুক্রবার, ২২ আগস্ট, ২০২৫

বেত্রাঘাতের দায় এড়াতে শিশু শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজ আখ্যা তদন্ত কমিটি গঠন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২৫, ০৭:৩৯ এএম

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ছড়া লেখা খারাপ হওয়ায় তাছিন তালহা (৭) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা জানাজানি হলে দায় এড়াতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উল্টো চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে অভিভাবককে গালমন্দ করেছেন।

এদিকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত রোববার ওই শিক্ষার্থীর মা এবং বিদ্যালয়ের ২৫ জন অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। গত সোমবার উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাছিন তালহা প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাসের সবাইকে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়া লিখতে দেন। তখন তালহা খাতায় বেশ কয়েকটি বর্ণ ছোট-বড় করে লিখে শিক্ষককে জমা দেন। কিছু লেখা ছোট-বড় এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় তাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ দেখা যায়। পরে দৈনিক সমাবেশ চলাকালীলে লাইন বাঁকা হওয়ায় আবারও তালহাসহ আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কঞ্চি দিয়ে মারেন অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি মাকে জানালে তার মা মারধরের কারণ জানতে স্কুলের ওই শিক্ষকের কাছে যান। এ সময় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাকে ও তার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালাগাল করেন শিক্ষক।

শিশুটির মা তাসলিমা আক্তার শাপলা বলেন, মারধরের বিষয়টি জানার পর আমি ওই শিক্ষকের কাছে কারণ জানতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার ছেলে আমার কাছে এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। তার ওপর লেখা খারাপ করেছে বলে আমাকে ও ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালাগাল করেছে। দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র কীভাবে চাঁদা চাইতে পারে? ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছে ওই শিক্ষক।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমিসহ অভিভাবকরা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ করেছি। সেখান থেকে করা তদন্ত কমিটি থেকে গত বুধবার একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে আগামী সোমবার ঘটনাস্থলে প্রমাণসহ উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাছিন তালহা বলে, স্যার আমাদের ছোট নদী ছড়া লিখতে দিয়েছিলেন। আমার লেখা ভুল হওয়ায় ও আবার লাইনে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না, সে জন্য আমাকে মারধর করেন। আমি এসে আম্মুকে নিয়ে স্কুলে গেলে স্যার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে বলেনÑ আমি নাকি চাঁদা চেয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. জালাল ম-ল বলেন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এই আচরণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চাইবে এটা অবিশ্বাস্য।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক আগে ওই ছাত্র আমার কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেছিল। সেদিন ক্লাসে হট্টগোল করায় ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে মেরেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে আমাকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে রিপোর্ট দেওয়া হবে।

ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, মারধরের ঘটনায় ছাত্রটির মা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একজন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদা দাবি করতে পারেÑ এটা আমার বোধগম্য নয়। ঘটনা কী ঘটেছে তা জানতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।