কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে পাটের ভালো ফলন ও দাম পেয়ে আনন্দিত কৃষকেরা। মৌসুমের শুরুতে খরার কারণে বীজ বপন ও জাগ দিতে দুশ্চিন্তায় পড়লেও শেষ পর্যন্ত সব প্রতিকূলতা জয় করে চাষাবাদে সফল হয়েছেন তারা। এ বছর পাটকাঠিরও ভালো দাম ও চাহিদা থাকায় কৃষকরা বাড়তি লাভের আশা করছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পাট চাষিদের কেউ পাট ধোয়া কেউ বা পাট শুকানোর কাজে ব্যস্ত। কেউ কেউ পাটকাঠি শুকাচ্ছেন। অনেকে আবার বাড়িতে পাইকার ডেকে পাট বিক্রি করছেন।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বাঘের বাজার এলাকার কৃষক জহুরুল হক বলেন, এবারে ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। প্রতিবিঘা জমি হালচাষ, নিড়ানি, পাট কাটা ও ধুতে সব মিলিয়ে তার প্রায় ১৭-১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এক বিঘা জমিতে পাটের ফলন হয়েছে প্রায় ১০ মণ। ইতোমধ্যে ৩৫’শ টাকা মণ দরে ১০ মণ পাট ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে খরচ বাদে ১৭ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করে পাট ও পাটকাঠি বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছেন তিনি।
একই ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামের কৃষক রহমত আলী জানান, তিনি এবারে চরের ১ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছেন। পাট আবাদের জন্য বিনা মূল্যে সরকারি পাটবীজ ও সার পেয়েছেন। ফলে আবাদে তার খরচ কিছুটা কমেছে। এবারে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। আর দু’তিন দিনের মধ্যে তার পাট ধোয়া যাবে। এবারে পাটের যে দাম তাতে ভালো লাভের আশা করছেন। পাটের এ রকম দর স্থিতিশীল থাকার প্রত্যাশাও করেন তিনি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাগদহ এলাকার কৃষক মোজাম্মেল হক ও এমদাদুল হকসহ উপজেলার অন্যান্য এলাকার পাট চাষিরা জানান, পাট চাষাবাদ করে একই জমিতে তারা রোপা আমন চাষ করছেন। পাটের ভালো ফলন ও দামে তারা খুশি। এখন পাট বিক্রির টাকা দিয়ে তারা আমন চাষের খরচের জোগান দিচ্ছেন। তা ছাড়া এবার পাট কাঠিরও চাহিদা ও দাম মোটামুটি ভালো। তাতেও বাড়তি লাভ হবে বলে জানান তারা।
উপজেলা পাট অধিদপ্তর জানিয়েছে, উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৩ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনা মূল্যে বিজেআরআই (রবি-১) জাতের পাটবীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। পাট চাষাবাদের জন্য মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবারে ৪৮০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা পাট চাষাবাদ করেছেন। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ২’শ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে পাটবীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। পাট চাষাবাদে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।