ময়মনসিংহের নান্দাইলে পাওনা টাকা আদায়ে দেনাদারদের নামসহ উল্লেখ করে টাঙানো ইনতাজ আলীর সেই ব্যানার নামিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ইনতাজ আলীকে বুঝিয়ে ব্যানার নামানো হয় এবং তাকে নিয়ে দেনাদারদের কাছে গিয়ে টাকা পরিশোধ করার জন্য চাপ দেন।
জানা গেছে, উপজেলার আচারগাঁও ইউপির টঙ্গীর চর গ্রামে বাড়ি ইনতাজ আলীর (৬৫)। চার ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ইনতাজ আলীর স্ত্রী দুই বছর আগে মারা গেছেন। জমিজমা বলতে বাড়িভিটার মাত্র ১০ শতক জায়গা। তাই গাছ কাটার শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ৬শ-৭শ টাকা মজুরিতে মানুষের গাছ কেটে দেওয়াই ছিল তার কাজ। মূলত গাছ ব্যবসায়ীদের কাজই বেশি করতেন তিনি। কাজ করতে গিয়ে অনেকের কাছেই তার পারিশ্রমিকের টাকা বকেয়া পড়ে। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও টাকা আদায় করতে পারছিলেন না।
এদিকে ইনতাজ আলীও বয়সের ভারে অসুস্থ, গাছ কাটার মতো পরিশ্রমী কাজ তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। মানুষের বাড়িতে গিয়ে টুকটাক কৃষিকাজ করে যা পান তা দিয়ে কোনোক্রমে তার সংসার চলছে। তিনি বিভিন্নজনের কাছে শ্রমিকের মজুরি বাবদ বকেয়া টাকা চাইতে গেলে বারবার খালি হাতে ফেরত আসেন।
একপর্যায়ে সপ্তাহখানেক আগে ইনতাজ আলী নান্দাইল মডেল থানায় এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ স্থানীয় লোকজনকে জানিয়ে বিষয়টি মীমাংসার পরামর্শ দেন। কিন্তু ইনতাজ আলী ৫শ টাকা দিয়ে ৪ ফুট বাই ৫ ফুট আকারের একটি ব্যানার তৈরি করেন। রঙিন ওই ব্যানারে ৬ পাওনাদারের নাম এবং বকেয়া টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ব্যানারটি টংগীর চর তিন রাস্তার মোড়ে একটি দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখেন।
ডিজিটাল ব্যানারে লেখা ছিল ইনতাজ আলী পাওনাদার-দিলু ব্যাপারী ৬ হাজার টাকা, হুমায়ুন ব্যাপারী ২ হাজার ৬০০, সুজন ব্যাপারী ৭৫০, নজরুল ব্যাপারী ২ হাজার ৪০০, বারেক গাছের ব্যাপারী ১৩ হাজার ও রতন গাছ কাটে ২০০ টাকা। ব্যানারের নিচে লেখা রয়েছেÑ থানা থেকে অর্ডার, এই বিষয়টা এলাকাবাসীকে জানানোর জন্য। যদি এই টাকা না দেন, তাহলে থানায় মামলা হবে।
বিষয়টি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ পদক্ষেপটি সবার বাহবা পেলেও ক্ষেপে যান পাওনাদাররা। এ অবস্থায় বুধবার দুপুরে পুলিশ গিয়ে ইনতাজ আলীকে বুঝিয়ে ব্যানারটি নামিয়েছেন।
এ বিষয়ে নান্দাইল মডেল থানার ওসি খন্দকার জালাল উদ্দিন মাহমুদ জানান, ওই লোকটি থানায় আসেনি, সম্ভবত তিনি নিজ থেকেই ওই ব্যানারটি টাঙিয়ে ছিলেন। তবে পুলিশ গিয়ে তাকে নিয়েই পাওনাদারদের কাছে গিয়ে টাকা পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়ে এসেছে। এরপরও তিনি কোনো অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।