নেপালে দুটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে গিয়ে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। আন্দোলন আর সহিংসতার মধ্যে কাঠমান্ডুর হোটেলে আটকা পড়েন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। তাদের ঘিরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ছিল সবার মধ্যে। তিন দিন হোটেলে বন্দি থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরেছেন জামাল, তপু, সোহেল রানারা। তাদের সঙ্গে একই বিমানে ফিরেছেন ক্রীড়া সাংবাদিকেরাও। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে করে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলা এ কে খন্দকার ঘাঁটিতে জামাল ভূঁইয়াদের বহনকারী বিমানটি অবতরণ করে। বিমান বাহিনী তাদের অফিসিয়াল ফেসবুকে বিষয়টি নিশ্চিত করে লেখে, ‘নেপালে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সি-১৩০বি বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে সফলভাবে দেশে প্রত্যাবর্তন করেছে।’ গতকাল কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ ফ্লাইট ধরে ফুটবল দল। দুঃসহ সময় পার করে তারা ফিরে আসায় দেশের ফুটবল অঙ্গনে স্বস্তি ফিরেছে।
ফুটবল টিম দেশে ফেরার পর সংবাদমাধ্যমকে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘সরকার ও ফুটবল ফেডারেশন আমরা একত্রে কাজ করতে পেরেছি। আমরা ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগের মধ্যে ছিলাম। আমাদের চিফ অ্যাভাইজারের সঙ্গে, চিফ অব আর্মি স্টাফ, চিফ অব এয়ারফোর্সÑ সবাই দায়িত্ব নিয়ে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিল। অনেক নির্দেশনাও দেওয়া হয়। আমরা মিশনটা সফল করে এসেছি। আর আমরা প্রমাণ দিয়েছি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আমাদের খেলোয়াড়দের প্রতি দায়িত্বশীল। আমি মনে করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রমাণ করে দিয়েছে, যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় কোনো বাংলাদেশি যদি আটকা থাকে, ওনারা জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুত আছেন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানসিকভাবে খেলোয়াড়দের সাপোর্ট দেব। ফিজিক্যাল কোনো ইনজুরি থাকলে আমরা সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।’
বাংলাদেশ ফুটবল দলের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিল পলিটিক্যাল মোহাম্মদ শোয়েব আব্দুল্লাহ অনেক সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশ দলকে নিরাপদে নেপাল থেকে বের করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন তিনি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে), কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশ সরকারের সম্মিলিত চেষ্টায় ফুটবল দলকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। নেপালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শফিকুর রহমান ও দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তাও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বার্তায় আশা প্রকাশ করা হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে ওই বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসবেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা। বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচের সংবাদ সংগ্রহের জন্য নেপালে যাওয়া সাংবাদিকেরাও একই ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ ফুটবল দল ৩ সেপ্টেম্বর নেপালে গিয়েছিল দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে। ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। দ্বিতীয় ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন-জি আন্দোলনে সহিংসতা শুরু হলে দ্বিতীয় ম্যাচ বাতিল হয়ে যায়। সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিমানবন্দর। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ফুটবল দল কাঠমান্ডুর হোটেলে আটকা পড়ে। তাদের ফিরিয়ে আনতে বিমানের একটি ফ্লাইট গত মঙ্গলবার কাঠমান্ডু গেলেও ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুকূল পরিস্থিতি না থাকায় নামার অনুমতি পায়নি। পরে সেটি ঢাকায় ফিরে আসে। গত বুধবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। দলের নিরাপত্তা ও নির্বিঘœ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দলের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।