ঘেরের পানি থইথই করছে। আর ওপরে ছাউনির মতো তৈরি মাচায় থোকায় থোকায় তরমুজ ঝুলছে। যশোরের কেশবপুর উপজেলার খুকশিয়ার বিলপাড়ের মাছের ঘেরে এভাবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে অর্ধশতাধিক চাষি সাফল্য পেয়েছেন। বিলে চাষ করা তরমুজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজধানী ও বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হচ্ছে। অধিক লাভবান হওয়ার চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলা শহরের ১৮ প্রায় কিলোমিটার দূরে শ্রীহরি নদীর তীরে অবস্থিত বিল খুকশিয়া। জলাবদ্ধতার কারণে বছরের পর বছর বিলের ৬ হাজার ৩৭৫ বিঘা জমিতে ফসলের আবাদ করতে পারেন না চাষিরা। জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০০৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড শ্রীহরি নদীতে নাব্য ফিরিয়ে আনতে এবং বিল খুকশিয়ার তলদেশ উঁচু করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করলেও সফলতা মেলেনি। এতে জমির মালিকরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়েন। এক প্রকার জমির মালিকরা বিলের জমিতে ঘের তৈরি করে মাছের চাষ শুরু করেন।
খুকশিয়ার ইকবাল হোসেন জানান, ১৩ বিঘা জমিতে তার মাছের ঘের রয়েছে। তিনি ওই ঘেরে ১৪শ’ মাচা তৈরি করে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করেন। এতে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ইতোমধ্যে ২৭৫ মণ তরমুজ বাজারজাত করেছেন। প্রতি মণ তরমুজের দাম পেয়েছেন ১২শ’ টাকা।
আবদুল হালিম খান জানান, মাছের ঘেরে ভেড়িতে ১২০ মাচায় তরমুজ চাষ করেন। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। এতে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
কৃষক আবদুল কুদ্দুস ৭ বিঘা মাছের ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষ করেছেন। তার উৎপাদিত তরমুজ আকারেও বেশ বড়। দামও বেশি পাচ্ছেন।
চাষি ইসরাফিল জানান, আনুমানিক দুই যুগ ধরে বছর বিল খুকশিয়া জলাবদ্ধ থাকায় কোনো ফসলের আবাদ করা সম্ভব হয় না। বিলে টিআরএম প্রকল্প শেষে তার মতো অর্ধশতাধিক চাষি মাছের ঘের তৈরি করেন। মাছ চাষের সঙ্গে এখন তারা ঘেরের ভেড়িতে তরমুজ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এখানকার তরমুজ রাজধানী, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। তরমুজ বিক্রি করে চাষিরা হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। এতে চাষি পরিবারে হাসি ফুটেছে।
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে এশিয়ান-১, পাকিজা সুপার, ব্লাক কিং, ব্লাক কুইন জাতের তরমুজ চাষ করে চাষিরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। যা অর্থনৈতিকভাবে এলাকাকে এগিয়ে নিচ্ছে। উন্নতমানের ফল উৎপাদনে নানা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।