ঢাকা শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাজশাহীতে বাড়ছে সাপে  কাটা রোগী সংখ্যা

রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:০৯ এএম

*** জুলাই থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৫১ জন সাপে কাটা রোগী
*** সাপে কাটার পর স্থানীয় কবিরাজ ও ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ায় বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা
*** সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আনার পরামর্শ চিকিৎকদের

রাজশাহী অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা। প্রায় প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন সাপে কাটা রোগী। এদের মধ্যে অনেককে নেওয়া হচ্ছে আইসিইউতে। কিস্তু চিকিৎসকরা বলছেন, সাপে কাটার পর অনেকে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কবিরাজ ও ওঝার কাছে। এতে বিলম্বিত হওয়া কারণে বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকি। শেষ সময় এলে রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত বছরের চেয়ে এবার মৃত্যুর হার এখন পর্যন্ত কম আছে।

জানা যায়, রামেক হাসপাতালে গত জুলাই থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫১ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছেন। শেষ ১৪ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি সাপে কাটা রোগী এসেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দেড় ঘণ্টার মাথায় একজন সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সাতজন রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করা হলেও ছয়জনকেই বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

হাসপাতালের আইসিইউ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে সর্বমোট ৫৭ জন রোগীর আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিল, এর মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ২৪ শতাংশ। অথচ এ বছরে গত সোমবার পর্যন্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৮৩ জন। এখন পর্যন্ত ১৪ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ানো সাতজন রোগী আইসিইউতে ভর্তি হলেও তাদের ছয়জনেরই মৃত্যু হয়েছে। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাপে কাটা রোগীর জন্য বিনা মূল্যে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়। প্রতিটি রোগীর জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খরচ করেছে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। কিছু রোগীর জন্য আরও বেশি। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাশার (২২) নামের এক তরুণ মারা গেছেন। তার বাড়ির রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার এলাকায়। তার চাচাতো ভাই আকাশ জানান, রাতে পদ্মার ধারে ঘুরতে গিয়েছিলেন বাশার। সেখানেই তাকে সাপে কামড় দেয়। রাতেই বাশারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির দেড় ঘণ্টার মাথায় ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ইমন নামের একজন ছাত্রকে ৪ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে সাপে কামড় দেয়। তার মামা মোহাম্মদ তুহিন জানান, তাদের বাড়ি নদীর পাশে। রাতে ইমন পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে হাঁটছিল। এ সময় রাস্তার পাশ থেকে চক্রাবখরা রঙের একটা সাপ কামড় দেয়। ওই রাতে ইমনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবু মন মানছিল না।

ইমনের ফুফা তাকে ওঝার কাছেও নিয়ে যায়। তুহিন বলেন, ওঝার প্রতি তার বিশ্বাস ছিল না। তাই তিনি পরের দিন ইমনকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। ইমনকে আইসিইউতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তার অবস্থার উন্নতি হলে বুধবার বিকেলে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়।

মোহাম্মদ তুহিন আরও বলেন, এলাকায় সাপের এত প্রাদুর্ভাব হয়েছে যে গত ১০ দিনে পাঁচ-সাতটা রাসেলস ভাইপার সাপ মারা পড়েছে। তার এক আত্মীয়র বাসায় বিছানার মধ্যে ঢুকে ছিল রাসেলস ভাইপার সাপ।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কুমার বিশ্বাস জানান, এ বছর জুলাই থেকে ১০ সেপ্টেম্বর (বুধবার) পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ৩৫১ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৭০ জন রোগীকে নির্বিষ সাপে কেটেছিল। বিষধর সাপে কেটেছিল ৮১ জন রোগীকে। এর মধ্যে ১৩ জনকে কেটেছিল রাসেলস ভাইপার সাপে। বাকি ৬৮ জন রোগীকে অন্যান্য বিষধর সাপে কেটেছিল।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, যেসব রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, তারা সবাই অনেক দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছেছিল। স্বাভাবিকভাবেই চিকিৎসা পেতে দেরি হওয়ার কারণে তাদের আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাই দ্রুত হাসপাতালে নিজের স্বজনদের অবশ্যই ভর্তি করতে হবে। নদীতীরবর্তী এলাকার কৃষকেরা গামবুট পরে মাঠে কাজ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।