ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

সাব-রেজিস্ট্রি অফিস যেন অনিয়মের আখড়া

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ০৩:৪১ এএম

*** টাকা ছাড়া হয় না, জমি কেনাবেচা রেজিস্ট্রি

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস যেন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ভোগান্তির কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রারের নাম ভাঙিয়ে অফিস স্টাফ এবং এক শ্রেণির দলিল লেখক প্রকাশ্যে ঘুষ আদায় করছেন। ফলে জমি কেনাবেচার জন্য আসা মানুষ চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

জানা যায়, জমির দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে জমি বিক্রেতার স্বত্ব নিশ্চিত করার জন্য পর্চা, খাজনা-খারিজ, এনআইডি, ছবিসহ আনুসঙ্গিক কাগজপত্র নিশ্চিত হওয়ার পর সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি ১ হাজার ১০০ টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে দলিল মূল্যের সাড়ে ৭ ভাগ ও পৌর এলাকায় সাড়ে ৯ ভাগ হারে কর জমা দিতে হয়। তারপরই একটি দলিল সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের কথা। কিন্তু সেই নিয়ম অনেক সময় মানা হয় না।

কোনো কাগজের ফটোকপি থাকলে ১০ হাজার, একই দাতার একাধিক দলিল হলে ৩ হাজার, হেবা দলিলের ক্ষেত্রে ৩ হাজার, হেবার ঘোষণাপত্র এবং দানপত্রে আয়কর বা টিন সার্টিফিকেট না থাকলে ৫ হাজার, বিক্রেতার জমির পর্চায় বাবা, মার নাম থাকলে ৫ হাজার, দাদা, দাদি, নানা, নানির নামে পর্চা থাকলে ১০ হাজার, নামের সঙ্গে ডাক নাম যুক্ত থাকলে ৫ হাজার, বণ্টন নামা দলিল ও রেজিস্ট্রি বায়নার ক্ষেত্রে ৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে আদায় করা হয়।

গত রোববার ২৮ সেপ্টেম্বর আয়েজউদ্দীন আজাদ নামক একজন জমি ক্রেতা মধুপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি ক্রয়ের দলিল করতে গিয়ে চরম হয়রানির শিকার হন। এরপর টাঙ্গাইল জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগে তিনি বলেন, মধুপুর পৌরশহরের মালাউড়ি মৌজার মুহাম্মদ আব্দুল মজিদের ৬ শতাংশ জমি কেনার জন্য নিয়মানুযায়ী সকল সরকারি ফি ব্যাংকে জমার পর দলিল প্রস্তুত করে নিবন্ধনের জন্য সাব-রেজিস্ট্রারের নিকট কাগজপত্র জমা দেন। দলিল দাতা ৮১ বছর বয়সি আব্দুল মজিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় হুইল চেয়ারে করে দুপুর ১২টায় অফিসে নিয়ে আসা হয়। সাব-রেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথকে দলিল সম্পাদনের বিষয়ে অবহিত করলে তিনি অফিসের নকলনবিস জসিম উদ্দীনকে দাতার শরীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেন। জমিদাতা আব্দুল মজিদ হুইল চেয়ারে বসে নকলনবিস জসিম উদ্দীনের নিকট জমি বিক্রির বিষয়ে হাঁ সূচক জবাব দেন। কিন্তু নকলনবিস জসিম উদ্দীন সাব-রেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে এসে দলিল লেখক আব্দুস সামাদ ও জমি ক্রেতা আয়েজউদ্দীন আজাদকে জানান, দাতা শারীরিকভাবে যেহেতু খুব একটা সুস্থ নয়। তাই দলিল সম্পাদন করতে সাব-রেজিস্ট্রারকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে।

জমি দাতা ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে সাব-রেজিস্ট্রার জমি নিবন্ধন করা যাবে না বলে দাতাকে সাফ জনিয়ে দেন। শুধু ঘুষ না দেওয়ায় তার দলিল সম্পাদন হয়নি বলে অভিযোগ তুলে তিনি  তদন্ত ও প্রতিকার দাবি করেন।

অভিযোগের বিষয়ে নকলনবিস মো. জসিম উদ্দীন কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকার করেন। দলিল লেখক আব্দুস সামাদ জানান, যা বলার জমির ক্রেতাকে বলেছি। সংবাদকর্মীদের কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে সাবরেজিস্ট্রার অঞ্জনা রাণী দেবনাথ বলেন, দাতা আব্দুস মজিদ শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে তিনি এক কর্মচারীর মাধ্যমে শুনেছেন। তাই দলিলটি করা হয়নি। অফিসে কেউ ঘুষ নেয় না। কোনো অনিয়মও নেই। কেউ এমনটি করে থাকলে ব্যবস্থা নেবেন। জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।