ঢাকা শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫

আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন ‘ভূতের বাড়ি’

রেজাউল করিম, রংপুর
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ০৩:৪৩ এএম

*** প্রকল্পের ঘরগুলোর দেওয়ালে দেখা দিয়ে ফাটল
*** অল্প কিছু ঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা থাকলেও বেশির ভাগ ঘরে যাওয়ার রাস্তা নেই

রংপুরের পীরগাছার প্রতিপাল গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে এখন থাকে না কেউ। ঝোপঝাড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন যেন ভূতের বাড়ি। কোথাও ধরেছে ফাটল, কোথাও দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্রকল্পে যাওয়ার রাস্তা নেই, নেই জীবিকার ব্যবস্থা। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আর থাকে না কেউ। ফিরে গেছেন সেই পুরোনো অস্থায়ী ঠিকানায়। ঘর আছে মানুষ নেই, আশ্রয়ণ প্রকল্প যেন ‘ভূতের বাড়ি’ ।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় উপজেলার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল গ্রামে বুড়াইল নদীর পাড়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের থাকার জন্য ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যে ঘরগুলো এক সময় পতিত হাসিনা সরকারের উপহারের ঘর হিসেবে পরিচিতি ছিল। যার প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। বেশিরভাগ ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয় পীরগাছা রেলওয়ে স্টেশন এলাকার অস্থায়ী বাসিন্দাদের। তবে বরাদ্দ পেয়ে সেসব ঘরে ওঠার পর বছরখানেক যেতে না যেতেই সেখান থেকে চলে গেছেন তারা।

সরেজমিন সেই প্রকল্পে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ঘর তালাবদ্ধ। অল্প কিছু ঘরে যাওয়ার জন্য রাস্তা থাকলেও বেশির ভাগ ঘরে যাওয়ার রাস্তা নেই। অন্যের বাড়ির আনাচে-কানাচে দিয়ে যেতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে কেউ না থাকায় সেগুলো লতাপাতা, ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে। স্থানীয়রা ঘরগুলোর বারান্দায় খড়, লাকড়ি স্তূপ করে রেখেছেন। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, নেই টিউবওয়েল। বিশেষ করে যে নদীর পাড়ে প্রকল্পটি করা হয়েছে সেই নদী পুনঃখননের কারণে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে ঘরগুলো। এ সময় কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে। তাদের অভিযোগ, সেখানকার স্থানীয় ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ না দিয়ে বাইরের এলাকার মানুষদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। রাস্তা নাই এ জন্য তারা কিছুদিন থাকার পর চলে গেছে।

স্টেশনের ভ্রাম্যমাণ কলা বিক্রেতা প্রকাশ চন্দ্র মোহন্ত জানান, তার তিনটি সন্তান। তিনজনই স্টেশনের পাশে স্কুলে পড়ে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দূরত্ব স্কুল থেকে বেশ দূরে। প্রতিদিন তিনিসহ ৪ জনের যাতায়াত খরচ কুলাতে না পেরে তিনি আর সেখানে থাকেন না।

এ বিষয়ে তাম্বুলপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল  জানান, প্রকল্পে যাওয়ার জন্য নদীর পাড় বেঁধে রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা তারা করেছেন। এর পরও সেখানে কেউ না থাকলে নোটিশ দিয়ে নতুন করে ভূমিহীনদের মধ্যে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. রাসেল  বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। সেখানে রাস্তা তৈরি করা হবে। জীবিকার ব্যবস্থাসহ আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তার পরও যদি কেউ না থাকে তাহলে নতুন করে অন্য ভূমিহীনদের সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।