বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা

মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা

পটুয়াখালী মির্জাগঞ্জে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, জনবল ও সরঞ্জামের মারাত্মকভাবে সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ফলে রোগীরা পর্যাপ্ত ও মানসম্মত সেবা পাচ্ছে না। চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য সহায়ক জনবলের অভাবের কারণে হাসপাতালের পক্ষে দৈনিক ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি রোগী দেখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও সম্ভব হচ্ছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

রোগী ও অভিভাবকরা জানান, হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান ত্রুটিযুক্ত ও অসন্তোষজনক। রোগী ভর্তি হলে দেখভাল করার জন্য নার্স এলেও ডাক্তার নিয়মিত আসে না। অনেক সময় ডাক্তারও পাওয়া যায় না।

তবে নার্সদের অভিযোগ, অপ্রতুল জনবল নিয়ে তাদের দিন-রাত গাধার মতো খাটতে হয়। একাধিক ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ তাদেরই সামলাতে হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীদের প্রত্যাশিত সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে। আর চিকিৎসকরা বলেন, চিকিৎসার মান ভালো। তবে জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা কার্যালয়ের তথ্যমতে, মির্জাগঞ্জে ১ লাখ ২৭ হাজার মানুষের বসবাস। চিকিৎসাসেবায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। বছরে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ২৫০-৩০০ রোগী চিকিৎসা নেন এবং প্রায়ই ৫০ শয্যার বিপরীতে ৭০-১০০ জন রোগী ভর্তি থাকে। জরুরি বিভাগে আসে ৩০ থেকে ৫০ জনের মতো। প্রতিদিন নরমাল ডেলিভারি হয় ৩০-৫০টা। কিন্তু যেখানে ২১ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা, সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৭ জন। এর মধ্যে একজন হারবাল বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।

হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা ১০ জন কিন্তু নেই একজনও। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন থাকার কথা, তবে যিনি আছেন তিনি ভারপ্রাপ্ত। মেডিকেল অফিসার ৭ জনের মধ্যে কর্মরত ৪ জন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ১১০ জনের প্রয়োজন হলেও আছে অর্ধেকের মতো। ফলে প্রতিদিন শতাধিক রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেখানে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটালাইজেশনের পেছনে ছুটছে মানুষ, সেখানে অ্যানালগ এক্স-রে মেশিন দিয়ে রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে মির্জাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আবার এ এক্স-রে মেশিন চালানোর টেকনিশিয়ানও নাই।

এদিকে গর্ভবতী মায়েদের ভোগান্তির অন্ত নেই। গাইনি বিশেষজ্ঞ থাকলেও এখানে সিজারিয়ান অপারেশন (সিজার) করা হয় না। তিন থেকে চারগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রসূতি মায়ের সিজারের জন্য। অন্যথায় ভাঙাচোরা রাস্তা মাড়িয়ে অ্যাম্বুলেন্স খরচ দিয়ে যেতে হচ্ছে জেলা ও বিভাগীয় শহরে। এরকম বিড়ম্বনা কজনের পক্ষেই বা সম্ভব! এ কারণে গর্ভবতী মা ও তাদের পরিবার মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন।

হাসপাতালে ভর্তি রোগী উপজেলার মাধবখালী গ্রামের মো. আজিজুল হাকিম বলেন, ‘আমি নিজে রোগী। দুই দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। দুই দিনে ডাক্তার এসেছে মাত্র একবার। কিন্তু হাসপাতালে কোথাও কোনো সিট নেই। আমি ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমার মতো অনেক রোগী ফ্লোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’

আমড়াগাছিয়া গ্রামের জামিনুর রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার মাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখন মনে হচ্ছে, মা মরে গেলেই তো শেষ। আর হাসপাতালে আসতে হবে না। ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না থাকে তবে মানুষ যাবে কোথায়। আমরা শুধু বলেই যাই, কিন্তু কোনো ফল পাই না।’

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা বলছেন, হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা মানসম্মত সেবা দিতে পারছেন না। অপ্রতুল ডাক্তার ও রোগ নির্ণয়ের ন্যূনতম সুবিধা না থাকার কারণে রোগীদের সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার হাসপাতালে গাইনি বিভাগ থাকলেও সিজারের কোনো ব্যবস্থা নেই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, ৫০ শয্যার হাসপাতাল হলেও রোগী থাকে ১০০ জনের বেশি। চিকিৎসক ও জনবলসংকট রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কম থাকায় নানা কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। ব্যাঘাত ঘটছে চিকিৎসাজনিত সেবায়।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক, পর্যাপ্ত জনবল, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন, রেডিওগ্রাফার সংক্রান্ত সংকটের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ সমস্যগুলো নিরসন হলে ভালো মানের সেবা দেওয়া সম্ভব।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!