ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

বিগ হিটিংয়ে ইমন-জাকেরদের কীর্তি

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: জুলাই ২৫, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বদলে গেছে বাংলাদেশ। এই কুড়ি ওভারের আধুনিক ক্রিকেটে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। আগে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের ক্রিকেটে বোলারদের কল্যাণে ম্যাচ জিতত বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিক ছিলেন না। সেই দৃশ্যপট এখন পুরোপুরি পাল্টে গেছে।

বোলাররা যেমন ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স শো করছেন, তাদের সঙ্গে ব্যাটসম্যানরাও ধারাবাহিক ভালো করছেন। বিশেষ করে দ্রুতগতিতে স্কোর বোর্ডে রান জমা করার দক্ষতা দেখিয়ে যাচ্ছেন তারা। নতুন ও তরুণ যারা টি-টোয়েন্টি দলে এসেছেন, মূলত তারাই ব্যাটিংয়ের ধরনে পরিবর্তন এনেছেন। বিশেষ করে তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, জাকের আলী অনিক, তাওহিদ হৃদয়, শেখ মেহেদী হাসান, শামীম পাটোয়ারীরা টি-টোয়েন্টি মেজাজের ক্রিকেটের সঙ্গে দারুণ মানানসই ব্যাটিং উপহার দিচ্ছেন।

আগে বলা হতো, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শারীরিক দিক থেকে অতটা শক্ত-সামর্থ্যবান নন। তাদের গায়ে জোর কম। হাত ও বাহুতে বেশি শক্তি নেই। এ কারণে তারা বিগ হিট নিতে পারেন না। কিন্তু এসব মিথ্যা প্রমাণ করে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উপভোগ্য টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং করছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। তাদের বিগ হিটিংয়ের ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তারা বড় বড় ছক্কা হাঁকিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন। ৮০-৮৫ মিটারে গিয়ে ঠেকছে তাদের ছক্কা।

কোন ডেলিভারিটি ছক্কা হাঁকানোর জন্য আদর্শ, তা ভালোভাবে বুঝে গেছেন ব্যাটসম্যানরা। কোন লেন্থ ও লাইনের ডেলিভারিকে কোথা দিয়ে তুলে মারলে শটটি পারফেক্ট হবে, বিগ হিট পূর্ণতা পাবে, সেই ধারণাও আগের চেয়ে অনেক ভালো ও পরিষ্কার হয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, ছক্কা হাঁকানোর দিক থেকে বর্তমান দলের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন পারভেজ হোসেন ইমন। টপ অর্ডারের এই ব্যাটসম্যান গড়ে প্রতি ১০.৭৬ বলে একটি করে ছক্কা হাঁকান।

এরপর আছেন জাকের আলী অনিক। প্রতি ১২.৬ বলে একটি ছক্কা মারেন। তানজিদ তামিম, তাওহিদ হৃদয়ও ছক্কা মারার ক্ষেত্রে বেশ পারদর্শী। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এই বিগ হিট নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যাওয়াকে খুব বড় ধরনের উন্নতি বলে মনে করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সিনিয়র সহসভাপতি ও পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম। তিনি বলেন, ‘একটা দীর্ঘ সময় আমরা বিগ হিটিংয়ে পিছিয়ে ছিলাম বা থেকেছি। আমরা সেভাবে বিগ হিট নিতে পারতাম না; কিন্তু এই সিরিজে মনে হচ্ছে আমাদের ব্যাটাররা ‘বিগ হিট’ নিতে পারে। বিগ হিট নেওয়ার ক্ষমতা, সামর্থ্য বেড়েছে। বিগ হিটের জন্য পারফেক্ট ডেলিভারিও নির্বাচন করতে পারছি আমরা।’

টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা বড় শট খেলছেন। শেষের দিকে সময়োপযোগী বিগ হিট নিচ্ছেন তারা। এ ক্ষেত্রে আলো কাড়ছেন তানজিদ তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন। তারা উইকেটে থিতু হতে পারলেই দর্শনীয় ছক্কায় গ্যালারিতে বল আছড়ে ফেলেন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মিরপুরের কঠিন উইকেটেও যেভাবে ৫টি ছক্কা হাঁকালেন জাকের, তা ছিল এক কথায় অসাধারণ। বলের মেধা ও গুণাগুণ বিচার করে ঠান্ডা মাথায় ব্যাকরণ মেনে খেলতে খেলতে কিছুক্ষণ পরপর নিজের শক্তির জায়গায় থাকা আলগা বল পেলেই তুলে মেরে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। শেখ মেহেদীও উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে এক্সট্রা কাভারের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে মাঠ গরম করেছেন। শ্রীলঙ্কা সিরিজে লিটনও ৫টি বিশাল ছক্কা হাঁকান। শ্রীলঙ্কায় তানজিদ তামিম ৬ ছক্কায় ৭৩ রানের একটি ঝোড়ো ইনিংস খেলেন। মিরপুরের মাঠে পারভেজ হোসেন ইমন ৫ ছক্কায় ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন।

জাকের ৫ ছক্কায় ৫৫ রান করেছেন। সব মিলিয়ে বিগ হিটিংয়ে যে বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশকে দেখছে বিশ্ব, সেটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ দল এমন প্রত্যাশায় ক্রিকেট-প্রেমীরা।