ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

নতুন আঙিকে নারী ফুটবল লিগ ডিসেম্বরে

স্পোর্টস রিপোর্টার
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২৫, ১১:২২ পিএম

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী কমিটির সহসভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ফাহাদ করিম বলেছিলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি নারী ফুটবল লিগ আয়োজন করবেন। তবে সহসাই হচ্ছে না ফ্র্যাঞ্চাইজি নারী ফুটবল লিগ। আপাতত জাতীয় নারী লিগ নিয়েই পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে নারী লিগ আয়োজনের কথা ভাবছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। কেননা অক্টোবরের পর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত নারী ফুটবলারদের কোনো আন্তর্জাতিক খেলা নেই। এ সময় এশিয়ান কাপের জন্য প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকবে সিনিয়র নারী ফুটবল দল। তাদের জন্য অন্তত ৮টি প্রীতি ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করছে বাফুফে। এরই মধ্যে ৩০টির মতো দেশে প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, এসব দেশ ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ১০০-এর মধ্যে আছে। তবে ১০০ বাইরে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও ম্যাচ খেলার জন্য চিঠি দিয়েছে বাফুফে। সিনিয়র দল ক্যাম্প ও প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও লিগ সময়মতো শুরু হবে। তবে ডিসেম্বরের লিগে সিনিয়র ফুটবলাররা খেলবেন কি না, বিষয়টি পরিষ্কার নয়। এ নিয়ে নারী দলের কোচ পিটার বাটলারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বাফুফে কর্তারা।


ডিসেম্বরে নতুন আঙিকেই ফুটবল লিগ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী লিগ আয়োজন করা হবে। কমপক্ষে দুই মাসব্যাপী লিগে ৩০টি ম্যাচ আয়োজনের চিন্তা করা হচ্ছে। কেননা, এএফসি টুর্নামেন্টে লিগের ক্লাবগুলো অংশ নিতে গেলে অন্তত লিগে ১০টি করে ম্যাচ খেলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই লিগে অংশ নেওয়া দল যাবে এএফসি টুর্নামেন্টেও খেলার সুযোগ পায়, সেই দিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন নারী লিগে ৬টি দল অংশ নেবে। যদিও দলগুলো এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। লিগের ফিকশ্চার, লিগে সিনিয়রদের খেলা না খেলা, লিগের বাজেট ও স্পন্সর ঠিক হওয়ার পর কোন ৬টি দল খেলবে, তা বাছাই করা হবে। তবে যে নারী দলগুলো আগে লিগে অংশ নিয়েছে কিংবা প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবকেও আগামী লিগে দেখা যেতে পারে।


গত জানুয়ারিতে নারী লিগের ক্লাবগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাফুফে নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ। তখন তিনি বলেছিলেন, একটি ক্লাব কিংবা দল যাতে ভালো মানের বেশি খেলোয়াড় নিতে না পারে, এ জন্য পুল প্রথা চালু করা হবে। তবে নতুন আঙিকে আয়োজিত লিগে পুল প্রথা নাও থাকতে পারে। ডিসেম্বরে নারী ফুটবল লিগ আয়োজন করা প্রসঙ্গে বাফুফে সহসভাপতি ফাহাদ করিম বলেন, ‘সিনিয়র ফুটবলারদের জন্য সেপ্টেম্বর থেকে ৬ মাসের ক্যাম্প প্রস্তুত করছি আমরা। আর নারী লিগ যেটা, এটি নতুন করে শুরু করব ৬টি দল দিয়ে। এটা নিয়ে এখন কাজ করছি। ডিসেম্বর থেকে শুরু করব লিগ। দুই কিংবা তিন মাসব্যাপী হবে এই লিগ। প্রতিবছরই হবে।’ লিগ নতুন করে গুছিয়ে আয়োজন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই লিগ এমন ভাবে করব আমরা, যেন পরবর্তী বছর এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ টুর্নামেন্টেও যাতে অংশ নেওয়া যায়। ফিফা গাইডলাইন অনুযায়ী হবে। তাদের উইমেন্স ডেভেলপমেন্ট একটা প্রোগ্রাম আছে, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা দলেই লিগটা ডিজাইন করছি।’ ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের কথা বলেছিলেন। এটা কবে হবে? ফাহাদ করিম বলেন, ‘আগে জাতীয় লিগ হবে। এরপর আমরা ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করব।’ পুল প্রথা প্রসঙ্গে বাফুফে এই সহসভাপতি বলেন, ‘আমার মনে হয়, পুল করার দরকার হবে না। যদি সিনিয়র খেলোয়াড়রা লিগে না খেলেন। তবে এটা এখনো নিশ্চিত নয়। দেশে ফিরলে সিনিয়রদের ব্যাপারে কোচের সঙ্গে আলাপ করব।’


এদিকে, পুল প্রথা চালু করা হলে নারী লিগে অংশ নেবে না বসুন্ধরা কিংস। সেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছে নারী লিগের সর্বোচ্চ তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। এ প্রসঙ্গে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানের বক্তব্য, ‘আমরা কিন্তু নারী লিগে গত তিনবার অংশ নিয়ে তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এখানে আরেকটি বিষয় যে, তিনবার কিন্তু আমরা একটি পয়েন্টও নষ্ট করিনি। আমার মনে হয় যে, সারা বিশে^ এটা একটা রেকর্ড হতে পারে তিন বছরেই অপরাজিত এবং কোনো পয়েন্ট নষ্ট না করে। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের নারী দলের প্রতি আগ্রহ আছে। আমরা আশা করছি যে, আমরা নারী লিগে অংশগ্রহণ করব। তবে কোনো কারণে পুল প্রথা হয়, কাউকে আলাদা সুবিধা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো তাহলে আমরা নারী লিগ নিয়ে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করব না। পুল প্রথা হলে আমরা নারী লিগে অংশগ্রহণ করব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি মনে করি যে, বাংলাদেশে নারী ফুটবল মাত্র হাঁটা-চলায়। এখন আপনি যদি পুল প্রথা করেন, আমার মনে হয় না খেলোয়াড়রা কাঙ্খিত পারিশ্রমিকটুকু পাবে। বিভিন্ন দল তাদেরকে নামে মাত্র মূল্যে দলে অর্ন্তভুক্ত করবে। যেটা আমি মনে করি যে, খেলোয়াড়দের মধ্যে সেটি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। আমরা চাই খেলোয়াড়রা আর্থিক নিশ্চয়তাটা পাক। আর্থিক নিশ্চয়তাটা হলো সবার জন্য, তাকে আর্থিক নিশ্চয়তা দেবেন, সে তার সবটুকু উজার করে দেবে। তার যদি আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকে তাহলে খেলার প্রতি পূর্ণ মনোযোগি হতে পারবে না।’